২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৫ মাস পর মূলহোতা বাহার গ্রেফতার

বড়লোক হওয়ার আশায় খুন করা হয় পোশাক শ্রমিক জাকিরকে

-

কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর পোশাক শ্রমিক জাকির হোসেন রুবেল (৩৫) হত্যার প্রায় পাঁচ মাস পর মূলহোতা শফিকুল ইসলাম বাহারকে গ্রেফতার করে খুনের রহস্য উদঘাটন করল ঢাকা জেলা দক্ষিণ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শনিবার কেরানীগঞ্জর মডেল থানাধীন খোলামোড়া এলাকা থেকে ঘাতক শফিকুল ইসলাম বাহারকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রোববার আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ঘাতক শফিকুল ইসলাম বাহার।
ঢাকা জেলা দক্ষিণ গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হাসান জানান, গ্রেফতারের পর শফিকুল ইসলাম বাহার ৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে দু’জন মিলে জাকির হোসেনকে হত্যার দায় স্বীকার করে।
সে আরো জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন পশ্চিম বড়িশুর এলাকার ওহিদুল ইসলামের বাড়ির তিনতলায় এক যুবক এলাপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে খুন হয়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ যখন মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারছিল না, তখন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলার দায়িত্ব ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, তদন্তের দায়িত্ব আমার ওপর দেয়া হয়। আমি দুই মাস মামলার রহস্য বিশ্লেষণ করতে করতে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আসামি শফিকুল ইসলাম বাহারের অবস্থান নির্ণয় করি। এরপর শনিবার কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন খোলামোড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। গ্রেফতারের পরে বাহার আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, বড়লোক হওয়ার আশায় বাহার জাকিরকে খুন করে। তার বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোট বেলা থেকেই। তাই জাকিরকে টার্গেট করে তার এক আরেক বন্ধুর সহযোগিতায় (মামলার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না) রুবেলকে হত্যা করে।
জবানবন্দীতে বাহার জানায়, তার সাথে জাকির হোসেনের সম্পর্ক বেশি দিনের ছিল না। জাকির ছিল একজন সমকামী। বাহার ও তার বন্ধুর সাথেও জাকিরের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল। জাকিরের সাথে সম্পর্কের পরে বাহার ধারণা করে জাকির হোসেন মোটামুটিভাবে ভালো টাকার মালিক। এ ধারণা থেকে বাহার ও তার বন্ধু মিলে জাকির হোসেনকে ১৬ ডিসেম্বরে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের লক্ষ্য ছিল জাকির হোসেনকে খুন করে তার ঘরে থাকা নগদ অর্থ লুট করে সে টাকা দিয়ে পিস্তল কিনবে এবং পরে বড়ো ধরনের অপরাধ করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাহার ও তার বন্ধু জাকির হোসেনের বাসায় অবস্থান নেয়। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জাকির হোসেন যখন বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠে তখন বাহার পেছন থেকে জাকিরের মুখ চেপে ধরে। আরেক বন্ধু এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। অনভিজ্ঞ থাকায় দু’জনই ধস্তাধস্তিতে আহত হয়। পরে রশি দিয়ে জাকিরের হাত-পা বেঁধে হত্যা নিশ্চিত করে,পরে ফজরের আজানের সময় তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ ঘটনার অপর আসামিকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার সম্ভব হবে বলেও জানান ঢাকা জেলা দক্ষিণ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক নাজমুল হাসান।
উল্লেখ্য, নিহত জাকির হোসেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কালিন্দি ইউনিয়নের পশ্চিম বড়িশুরের (মাদারীপুর গ্রাম) ওহিদুল ইসলাম সেলিমের বাড়ির তৃতীয়তলায় ব্যাচেলর হিসেবে ভাড়া থাকতেন। তিনি কালিগঞ্জ আলম মার্কেটের মাহিম গার্মেন্ট এ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
আসামি শফিকুল ইসলাম বাহারের বাবার নাম আব্দুল বাতেন। তারা কামরাঙ্গীর চরে ভাড়া বাসায় থেকে ঢাকার মেটাডোর বলপেন কোম্পানিতে চাকরি করত। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ওলিপুর উপজেলার গড়াইপুর গ্রামে।


আরো সংবাদ



premium cement