২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তিন সিটিতে চলছে গণগ্রেফতার

নির্বাচন কমিশন নিদ্রামগ্ন : রিজভী

-

বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন জানিয়ে অবিলম্বে তার সুচিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে জনসমর্থনহীন নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা খুলনা-গাজীপুরের সন্ত্রাসের আবহে নতুন মডেলের ভোট জালিয়াতির আসল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে হাজারো অভিযোগ দাখিল করলেও কখনও কোনো পদপে কমিশনের প থেকে নেয়া হয়নি। মনে হয় তারা চমকপ্রদ ঘুমের বড়ি খেয়ে নিদ্রামগ্ন থাকেন।
গতকাল রোববার সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া প্রসঙ্গ : লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শনিবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা কারাগারে তার সাথে সাাৎ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। তার জ্বর ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা কোনোভাবেই কমছে না। সাধারণত তিনি দর্শণার্থীদের সাথে নিচে নেমে কথা বলেন, কিন্তু এখন তিনি খুব বেশি অসুস্থতার কারণে দোতলা থেকে নামতেই পারছেন না। তিনি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। তার শারীরিক সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারাগারে অবর্ণনীয় কষ্টে রাখার জন্যই তার অসুস্থতা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারবার ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসার দাবি জানানো হলেও সরকার ভ্রƒপেহীন ও উদাসীন। যেন শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দিতেই তাকে কারাগারের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যেন এক ভয়াবহ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ল্য নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশনেত্রীর ওপর সরকারপ্রধানের এই প্রতিহিংসা এক অশুভ অপশাসনেরই বার্তা দেয়। আমরা আবারো দলের প থেকে সরকারের এই নির্দয় আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গ : রিজভী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন সিটি করপোরেশনে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের এজেন্টদের সাদা পোশাকধারী কর্তৃক তুলে নেয়ার পর অস্বীকার করা হচ্ছে। রাজশাহীতে যাদেরকে এজেন্ট মনোনীত করা হয়েছে তাদের কারো নামেই কোনো মামলা নেই। অথচ গোয়েন্দা পুলিশ এজেন্টদের নির্বিচারে আটক করে ১৫-২০ ঘণ্টা পর তাদের নামে মিথ্যা মামলা-বানোয়াট মামলা সাজিয়ে গ্রেফতার দেখাচ্ছে। একই রকম সিলেট ও বরিশালে। উদ্দেশ্য একটাই ভোটারদের ভয় পাইয়ে দেয়া।
তিন সিটিতে পুলিশি অভিযানের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি, নির্বাচনী প্রচারণায় মতাসীনদের বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। মতাসীনরা নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করে চলেছে। বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদল গেছেন ইসিতে। এখন যেসব অভিযোগ তা স্থানীয়ভাবে বলছেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে বলছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলো পাওয়ার পরও নির্বিকার, নিশ্চুপ। তারা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে নিশ্চুপ বসে আছেন। মনে হয় চমকপ্রদ ঘুমের বড়ি খেয়ে নিদ্রামগ্ন থাকেন এই নির্বাচন কমিশন। ইসির এই নীরব দর্শকের ভূমিকা জনগণের কাছে অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত। শুধু নীরব নয়, সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করছে তারা। ভোটসন্ত্রাসকে মহিমান্বিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অভিন্ন।
রিজভী বলেন, বরিশালে ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এ কে এম শহীদুল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর সেক্রেটারি জহিরুদ্দিন মো: বাবর, রাজশাহীর মাইনুল ইসলাম হারু, খন্দকার ওয়ায়েস করনী ডায়মন্ড, ইফতিয়ার মাহমুদ বাবু, শিবলী, হাফিজুল ইসলাম আপেল গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দলের পক্ষে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা প্রসঙ্গ : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, বিশ্বের বরণ্যে অনেক নেতৃবৃন্দ আমরা দেখেছি, যারা জাতির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু মতায় থাকতে স্বদলীয় চামচাদের দ্বারা সারা দেশের মানুষের পকেট কেটে, দোকানদারদের পকেট কেটে সংবর্ধনা দেয়া হলো ঢাকা শহরবাসীকে এক ভয়ঙ্কর হয়রানি ও নিপীড়নের মধ্যে রেখে, যন্ত্রণা দিয়ে। গোটা ঢাকা শহরকে কালকে রুদ্ধশ্বাসে পরিণত করে এই যে আদিখ্যেতা সংবর্ধনারÑ এটার জন্য মানুষের হৃদয়ে ঘৃণার সঞ্চার হয়েছে। আমি আওয়ামী নেতৃবৃন্দকে বলব- একটু দেখার চেষ্টা করুন। আপনাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলুন- তারা যেন সত্যিকার অর্থে একটা জরিপ করে আসল রিপোর্টটা প্রধানমন্ত্রীকে দেয়। তাহলে কালকে (শনিবার) যে জনযন্ত্রণা, জীবনযন্ত্রণা দিয়ে তিনি যে সংবর্ধনা নিলেন এই আদিখ্যেতা সাধারণ মানুষ কিভাবে নিয়েছে সেটা তিনি বুঝতে পারবেন। তবে উন্নয়নের জন্য নয় শিগগিরই দুর্নীতির জন্য শেখ হাসিনা সংবর্ধনা পাবেন। কারণ এই সরকার দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement