২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভুল চিকিৎসায় ২০ জনের চোখ নষ্ট

চিকিৎসকদের নৈতিকতা নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন

-

চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চু শিবিরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ২০ জনের চোখ হারানোর ঘটনার ওপর বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট বিষয়ে ডাক্তারদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, রিপোর্টটি প্রমাণ করে ডাক্তারদের নৈতিকতার মান কোথায়।
গতকাল এ সংক্রান্ত রুলের শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত। সাথে ছিলেন শুভাষ চন্দ্র দাস। ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা: আবুল কালাম আজাদ ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা: মো: খাইরুল আলমের পে ছিলেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম।
শুরুতে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের দাখিল করা পৃথক দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, রিপোর্টে অপারেশনকারী ডাক্তারদের দ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, ডাক্তারদের দতা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা জানতে চাই, এখানে কোনো অবহেলা ছিল কি না? চিকিৎসাজনিত কোনো অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না? যেহেতু অপারেশনের প্রথম ও তৃতীয় দিন কোনো ঘটনা ঘটেনি, চোখ হারানোর ঘটনা ঘটেছে অপারেশনের দ্বিতীয় দিন, সে েেত্র সেদিন (দ্বিতীয় দিনে) যেসব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়েছে, তার কোনো না কোনো কিছুতে জীবাণুর উপাদান ছিল, যা সংক্রমিত হয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ েেত্র ডাক্তারদের কোনো চিকিৎসাজনিত অবহেলা ছিল কি না, যা তাদের আগেই পরীা করা উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি।
জবাবে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, অপারেশনকৃত চোখ নষ্ট হয়েছে কিন্তু অন্য চোখটি নষ্ট হয়নি। এ বাক্যটির প্রতি আদালত আপত্তি তুলে বলেন, এটি আনওয়ান্টেড (অবাঞ্ছিত) এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট প্রমাণ করে আমাদের দেশে ডাক্তারদের নৈতিকতার মান কোথায়!
শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম ওষুধ সরবরাহকারীদের এ মামলায় পভুক্ত করার আবেদন করেন। এ সময় আদালত বলেন, তাহলে আপনি তাদের পভুক্ত করুন। এরপর আদালত মামলাটির শুনানি আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত মুলতবি রাখার আদেশ দেন।
গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এর মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের প থেকে ১২ মার্চ একসাথে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ তি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়। আর বাকি একজন অন্য জায়গায় চিকিৎসা নিতে থাকেন।
আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে কেন তিপূরণ দেয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।


আরো সংবাদ



premium cement