২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কাশ্মিরে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নিহত ২

সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সতর্ক অবস্থায় ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা -

ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে রমজান মাস উপলক্ষে একতরফাভাবে ঘোষিত ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতি শেষে আবার অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার নতুন করে শুরু হওয়া সেনা অভিযানে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।

বান্দিপোরার পানার বনভূমি এলাকায় ওই দুইজন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া। যদিও সংবাদসংস্থা এএনআই'র পক্ষ থেকে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত চারজন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গত ৯ জুন গেরিলারা নিরাপত্তা বাহিনীর টহলদারি দলের উপরে গুলিবর্ষণ করলে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। ওই অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৩ জুন দুই গেরিলা ও এক সেনা জওয়ান নিহত হয়েছিলেন।

রমজান মাস উপলক্ষে কাশ্মিরে এক মাস সংঘর্ষবিরতি কার্যকর ছিল। রোববার তা প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এরপরেই সোমবার সকালে জম্মু-কাশ্মিরের বান্দিপোরার বনভূমি এলাকায় শুরু হয় নতুন করে ‘অপারেশন অল আউট’ নামের অভিযান।

কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা অভিযান চালিয়ে থাকে ভারতীয় বাহিনী। তবে রমজান উপলক্ষে এক মাসের অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছিল তারা। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গত ১৭ মে ভারদের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মিরে গেরিলাদের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই নির্দেশের পর গেরিলাদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন অল আউট’ কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়। জম্মু-কাশ্মির রাজ্য সরকার ও বিরোধীদলের পক্ষ থেকে সরকারি ওই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানানো হয়।

রমজান শেষে ঈদের পরেও অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে বলে বিভিন্নমহলে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে গেরিলাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার সংঘর্ষ বিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি হয়নি।

রাজনাথ বলেন, ‘উপত্যকায় শান্তির জন্য আমরা ওই ঘোষণা দিয়েছিলাম। পবিত্র রমজান মাসে মানুষের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে বলেছি তারা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চায় তা নিক। নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিযান শুরু করুক। সরকার উপত্যকায় শান্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’

রাজনাথ আরো বলেন, ‘বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রবিরতি পালন করলেও বিদ্রোহীরা অনবরত বেসামরিক লোকজন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে গেছে। এতে হতাহত হয়েছে বহু মানুষ।’

ভারতীয় পুলিশের দাবি, গত ৩০ দিনে ছয় বেসামরিক, ৯ নিরাপত্তাকর্মী ও ২০ জনেরও বেশি বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে মারা গেছে। এ সহিংসতা চলার মধ্যে প্রখ্যাত সাংবাদিক সুজাত বুখারীকে রহস্যজনকভাবে হত্যা করা হয়।

এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘর্ষবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছে রাজ্যে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকারের প্রধান শরিক পিডিপি। পিডিপি’র মতে, সেনা অভিযান বন্ধ থাকায় মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। বিজেপি সংঘর্ষ বিরতি চালু রাখার বিরোধী। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি দলের মধ্যে কিছুটা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেস বলেছে, কাশ্মিরে মোদি সরকারের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় নজির। দলটির মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফর সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কারণ, জাতিসঙ্ঘ কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নয়াদিল্লির সমালোচনা করেছে।

হুররিয়াত কনফারেন্সের একাংশের চেয়ারম্যান মীরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেছেন, ‘কাশ্মিরে শান্তি ফেরানোর সঠিক চেষ্টা ছাড়া কেবল অভিযান বন্ধ রাখার কোনো অর্থ নেই। হুররিয়াত আলোচনার বিপক্ষে নয়। কী নিয়ে আলোচনা হবে তা আমরা দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জবাব মেলেনি।’

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত অঞ্চলগুলোর একটি কাশ্মির। জননিরাপত্তা আইনের নামে সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী ধারাবাহিক আটক-গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে। ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে তখন পর্যন্ত এই আইনের আওতায় ৮ হাজার থেকে ২০ হাজারের মতো মানুষকে আটক করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement