২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

  পানির তোড়ে বিলীন ফসলিজমি গোসাইরহাটের ব্রিজ নির্মাণের ২ বছর পরও অ্যাপ্রোচ নির্মিত হয়নি

-

গোসাইরহাটের কোদালপুর বালুচর ও গরীবেরচর পদ্মার শাখা জয়ন্তী নদীতে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। গত দুই বছরেও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ না করায় জনসাধারণের কল্যাণের পরিবর্তে চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতকারী স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীসহ জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর এক পাশে বাঁধ দেয়ায় পানির তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী ফসলিজমি। এ ছাড়া ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বসতবাড়ি। নদীভাঙনের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নতুন করে অ্যাপ্রোচ নির্মাণে সরকারের অতিরিক্ত কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও সরেজমিন জানা গেছে, বৃহত্তর ফরিদপুর গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর পদ্মার শাখা বালুচর জয়ন্তী নদীতে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩ মিটারের একটি ব্রিজ নবারন ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রগতি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাসুদ আলম নির্মাণকাজ করে। একই পরিমাণ অর্থে একই উপজেলার গরীবেরচর বর্তমান আলাওলপুর জয়ন্তী নদীতে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে এম এ এস কনস্ট্রাশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে শরীয়তপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল চৌধুরী ৬৩ মিটার দৈর্ঘ্য আরো একটি ব্রিজ নির্মাণ করেন। সরেজমিন জানা গেছে, ব্রিজের ছাদ ঢালাই করার সময় নদীতে বাঁধ দিয়ে কাঠের বল্লি দিয়ে ছাদের সেন্টারিং করা হয়। ছাদ ঢালাই শেষ হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত ওই সব কাঠের বল্লি ও বাঁধের মাটি অপসারণ করেনি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে গত দুই বছরেও ব্রিজ দুটির অ্যাপ্রোচ সড়ক না করার কারণে এলাকাবাসীর ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্থানীয় লোকজনের চেষ্টায় বাঁশের চাড় বানিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করে। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নদীর দুই পাড়ে যাতায়াতকারী জনসাধারণ। নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্টরা। এতে করে সরকারের অতিরিক্ত প্রায় এক কোটি টাকা ব্যায় হচ্ছে। অপর দিকে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার পর কাঠের বল্লি ও মাটি অপসারণ না করায় বালুচর ব্রিজের পশ্চিম পাড় ও গরীবেরচর ব্রিজের পূর্বপাড় ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
আবুল ঢালী গ্রামের কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, দুই বছর যাবত ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। এখনো পূর্ব পাশের অ্যাপ্রোচ রোড করেনি। ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর এক পাশ দিয়ে বাঁধ দিয়ে নির্মাণকাজ করায় অপর পাশের পাড় ভেঙে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর পূর্ব পাশের দুটি বসতবাড়ি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার শরীয়তপুর জেলা পরিষদের সদস্য, গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য চৌধুরী গোলাম রাব্বানী শাকিল ও তারই পার্টনার হেমায়েত হোসেন সেন্টু বলেন, তিন বছর আগে ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নদীভাঙনের কারণে এক পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক করতে পারিনি। ওই সময় প্রকৌশলীরা দফায় দফায় এসেও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। এখন তারা ডিজাইন করে পাঠিয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি, এক মাসের মধ্যেই অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ শেষ করতে সক্ষম হবো।
শরীয়তপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম বাদশাহ মিয়া বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে পাড় ভেঙেছে। ভাঙনকবলিত স্থানে বালু দিয়ে ভরাট করে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি করে দেয়া হবে। যাতে জমির মালিক তাদের জমি ফেরত পেতে পারে। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য অনুমোদিত ডিজাইন হাতে পাওয়ার পর কাজ শুরু করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement