২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতে নির্বাচন এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত, এত সময় কেন লাগবে!

- সংগৃহীত

প্রায় ৯৭ কোটি ভারতীয় বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মানুষ ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। বিশাল এই মহড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচন এবং ৪ জুন ফলাফল ঘোষণার আগে ৪৪ দিন সময় লাগবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে চাইছেন। তিনি বিরোধী দলগুলোর বিস্তৃত কিন্তু নড়বড়ে জোটের মুখোমুখি হবেন। মোদির জনপ্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করতে এই জোটের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

বেশিভাগ জরিপে দেখা গেছে, মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সহজেই জয়ী হবে। এই জয় মোদিকে ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ফলপ্রসূ নেতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

এত সময় লাগছে কেন?
এর পেছনে দু’টি মূল কারণ রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের বিশাল আয়তন এবং প্রত্যেক নিবন্ধিত ভোটার যাতে তাদের ভোট দিতে সক্ষম হন তা নিশ্চিত করার জন্য যে বিস্ময়কর মাত্রার সরবরাহ ব্যবস্থার প্রয়োজন।

বছরের পর বছর ধরে ভোটের সময়সীমা ওঠা-নামা করেছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫১-১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে প্রায় চার মাস সময় লেগেছিল। আর ১৯৮০ সালে সময় লেগেছিল মাত্র চার দিন। তবে ২০১৯ সালে ভোট গ্রহণে সময় লেগেছিল ৩৯ দিন, আর এবারের নির্বাচন দ্বিতীয় দীর্ঘতম।

ভারতের নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ৯৬ কোটি ৯০ লাখ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।

সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ জন সদস্যকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্র-শাসিত এলাকা ভিন্ন ভিন্ন সময় ভোট দেবে। প্রতিটি ধাপ হবে এক দিনে, যার প্রথমটি ১৯ এপ্রিল এবং শেষটি ১ জুনে।

কোনো কোনো রাজ্য এক দিনে ভোট সম্পন্ন করলেও, অন্যান্য জায়গায় তা আরো বেশি সময় নিয়ে হতে পারে। যেমন, সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ, যার ২০ কোটি জনসংখ্যা ব্রাজিলের সমান, সাতটি ধাপেই ভোট গ্রহণ করবে।

প্রতিটি ভোটারের সুযোগ থাকবে
ভারতের নির্বাচন কমিশনকে প্রতিটি ভোটারের দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি ভোট কেন্দ্র নিশ্চিত করতে হবে।

গবেষণা কেন্দ্র পিআরএস লেজিস্লেটিভ রিসার্চ-এর চাক্সু রায় বলেন, ‘প্রতিটি ভোটার যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।’

প্রায় দেড় কোটি নির্বাচনী কর্মকর্তা আর নিরাপত্তা-কর্মীকে দেশের পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, মরুভুমি পার হয়ে প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছাতে হবে। কখনো নৌকা দিয়ে, কখন পায়ে হেঁটে, এমনকি ঘোড়া চরেও।

এটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হতে পারে। ভারতে ২০১৯ সালে যখন শেষ লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল, তখন নির্বাচনী-কর্মীদের একটি দল চার দিন ধরে ৩০০ মাইল (৪৮০ কিলোমিটার) পাড়ি দিয়েছিলেন, যাতে চীন সীমান্তের কাছে অরুনাচল প্রদেশ রাজ্যের একটি গ্রামে শুধু একজন ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

কর্মকর্তারা ২০১৯ সালে হিমালয় পর্বতে ১৫ হাজার ২৫৬ ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটি গ্রামে যান, সেখানে একটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য। সেটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থানের ভোট কেন্দ্র।

এবারো দূর-দুরান্তে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যার মধ্যে একটি থাকবে কেরালা রাজ্যের দক্ষিণে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে। গুজরাট রাজ্যে একটি জাহাজের কন্টেইনারের ভেতরে একটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

কড়া নিরাপত্তা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে বহু ধাপের নির্বাচনের পেছনে মূল কারণ হলো নিরাপত্তা।

সহিংসতা রোধ করতে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভোটিং মেশিন পরিবহনের জন্য রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি হাজার হাজার ফেডারেল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। ফেডারেল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাধারণত সীমান্ত পাহারা দেয়।

বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের কারণে এর আগে নির্বাচন পণ্ড হয়েছে।

কিন্তু বছরের পর বছর ধরে কড়া নিরাপত্তার কারণে এ ধরনের সহিংসতা কমে এসেছে এবং তুলনামূলক শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিভ কুমার বলেন, ‘দেশের ভুগলের দিকে তাকান। এখানে নদী আছে, পাহাড়, বরফ, জঙ্গল আছে ... নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচলের কথা ভাবুন। তাদের দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে হবে। আমরা অতিরিক্ত আরেকটা মাইল হাঁটব, যাতে ভোটারদের হাঁটতে না হয়।’
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement