২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতে লোকসভা ভোটের প্রচারে তারকা প্রার্থীরা

ভারতে লোকসভা ভোটের প্রচারে তারকা প্রার্থীরা - সংগৃহীত

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়েছে জোরকদমে। তারকা প্রার্থীরাও নেমে পড়েছেন ভোটের ময়দানে।

প্রতি নির্বাচনে কয়েকজন তারকা প্রার্থী রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামেন। এবারো পশ্চিমবঙ্গেতৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়ছেন ছোট ও বড় পর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।

দেব বনাম হিরণ
পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে এবারো তৃণমূল প্রার্থী করেছে বর্তমান সদস্য দেব ওরফে দীপক অধিকারীকে। তার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী মেদিনীপুর সদরের বিধায়ক হিরণ ওরফে হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়।

দেব ও হিরণ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের দুই তারকা। দুজনই নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। দিনক্ষণ ঘোষণার আগে দুই অভিনেতাই নেমে পড়েন ভোটের প্রচারে।

বৃহস্পতিবার নিজের সংসদীয় এলাকায় প্রচার করেন দেব। দাসপুরের রসিকগঞ্জে ভস্মীভূত ধূপের কারখানায় যান তিনি। পানি-কাদা পেরিয়ে মাটিতে বসে কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন।

দেবকে দেখে কারখানার সামনে জড়ো হয় বিপুল লোকজন। সবার কথা শুনে তাদের সাহায্যের আশ্বাস দেন দেব। ঘাটালের কুশপাতা থেকে মিছিল শুরু করেন তিনি। হাজার হাজার মানুষের ভিড় ছিল মিছিলে। রাস্তার দু’পাশেও ছিল কৌতূহলী জনতা।

পিংলার কর্মসূচি ছোট করে দাসপুরে গিয়েছিলেন হিরণ ওরফে হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়। দেবকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘আগুন নিভে গেলে দেব এখানে ছবি তুলতে আসবেন। গত ১০ বছরে দেব ঘাটাল লোকসভার মানুষের কাছে কতবার এসেছেন?’

দেবের জবাব, ‘হিরণ অনেক কথা বলেছেন শুনেছি। এটাই আজকের রাজনীতির চল। কুকথা না বললে কি রাজনীতি করা যায় না!’

লকেট বনাম রচনা
পশ্চিমবঙ্গের অন্য যে কেন্দ্রে অভিনয় জগতের দুই ব্যক্তিত্ব মুখোমুখি, সেটি হুগলি। এই কেন্দ্র থেকে জিতে গতবার সদস্য হয়েছিলেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী একসময়ের নায়িকা, এখন ছোট পর্দার জনপ্রিয় শো সঞ্চালক রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুজনই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েছেন। আজ দুই প্রার্থীর গন্তব্য জমির লড়াইয়ের জন্য পরিচিত সিঙ্গুর। এদিন এলাকার বিখ্যাত ডাকাত কালী মন্দিরে পুঁজা দেন রচনা। লোকসভার অধীন বিভিন্ন বিধানসভার জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। কর্মীসভায় অংশ নেন। আজ ধনিয়াখালি ও চুঁচুড়া এলাকায় রচনার কর্মসূচি ছিল।

লকেটের নাম প্রার্থী হিসেবে আগেই ঘোষণা করেছে বিজেপি। গত সোমবার হুগলি জেলার সদর শহর চুঁচুড়া থেকে প্রচার শুরু করেছেন বর্তমান সদস্য। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়িয়েছেন লকেট। তবে হিরণের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কঠোর শব্দ ব্যবহার করেননি বিজেপি নেত্রী।

লকেট বলেন, ‘সন্দেশখালি নিয়ে মানুষ ফুঁসছে। অভিনেত্রী এনে ক্ষতে প্রলেপ দেয়া যাবে না।’

লকেট ও রচনা একই ছবিতে অভিনয় করেছেন। সমসাময়িক এই দুই অভিনেত্রীর সম্পর্ক ভালো। রচনা বলেন, ‘পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে রাজনীতির লড়াই হবে।’

যাদবপুরে সায়নী
কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির অভিজাত কেন্দ্র যাদবপুর। এখান থেকে ঘাসফুলের টিকিট জিতেছেন শিল্পী কবীর সুমন থেকে ইতিহাসবিদ সুগত বসু। সেই কেন্দ্রে টিকিট পেয়েছেন বড় ও ছোট পর্দার পরিচিত মুখ সায়নী ঘোষ।

অভিনেত্রী হলেও এখন রাজনীতিতে অনেকটা সময় দেন সায়নী। যুব তৃণমূলের সভানেত্রীর পদে আছেন তিনি। টিকিট পেয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারে। জনসংযোগ চলাকালীন তিনি একেবারে দলনেত্রীর ভঙ্গিতে দোকানে ঢুকে পড়েন।

রাজ্য সরকারের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নারীদের পরিচালিত রেস্তোরাঁ রয়েছে বারুইপুরে। সেখানে ঢুকে মোমো তৈরি করেন সায়নী।

মেদিনীপুরে মালিয়া
অভিনয় জগতের আরেক মুখ জুন মালিয়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার সদস্য। এবার তাকে দিল্লির ভোটে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রচারে নেমে পড়েছেন জুন।

এরই মধ্যেই এলাকায় ঘুরে ঘুরে জনসংযোগ শুরু করেছেন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অভিনেত্রী প্রার্থী। এই কেন্দ্রে বর্তমান সদস্য বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় জুনের সমর্থনে সভা করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যিনি পার্কে হাঁটেন রোজ সকালে, তাকে সাংসদ করবেন, না যিনি রাস্তায় লড়াইয়ে থাকবেন, তাকে দিল্লি পাঠাবেন?’

অন্যান্য তারকা
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় যে তারকা লড়াইয়ে রয়েছেন, তিনি শত্রুঘ্ন সিনহা। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল কেন্দ্রের বর্তমান সদস্য এবারো তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন।

বাংলা ছবির আরেক সাবেক নায়িকা শতাব্দী রায় এবারো ঘাসফুলের প্রার্থী বীরভূম কেন্দ্রে। সদ্য পদত্যাগী পুলিশ কর্মকর্তা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট পর্দার পরিচিত মুখ। তিনি তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন মালদা উত্তর কেন্দ্র থেকে।

এত সংখ্যায় তারকা প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বামেরা। হুগলির শ্রীরামপুর কেন্দ্রে বামেদের তরুণ প্রার্থী দীপ্সিতা ধর বলেন, ‘রাজনীতিতে যখন বিনোদন বেশি গুরুত্ব পায়, তখনই এমনটা হয়। রাজনীতিতে যে কেউ আসতে পারেন। কিন্তু তার জন্য ন্যূনতম প্রস্তুতি দরকার। শুধু তারকা বলে টিকিট দেয়া হয়েছে।’

তারকারা সামনে থাকলেও আদতে পেছনে লড়াই চলে রাজনীতির কারবারিদের মধ্যে। হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে ভোটযুদ্ধে নামা ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, ‘আপনারা ভাবছেন, নায়কের বিরুদ্ধে নায়কের লড়াই। আসলে লড়াইটা রাজনীতির। এই লড়াইয়ে আসল নায়ক আমাদের প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদি।’

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এই সময় দুই শীর্ষ অভিনেত্রী ও সাংসদ নুসরাত জাহান এবং মিমি চক্রবর্তিকে এবার ভোটের লড়াইয়ে দেখা যাবে না। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে যারা যান, তাদের সংসদে হাজিরা কেন এত কম? কেন তারা প্রশ্নোত্তর পর্ব বা বিতর্কে কার্যত অংশই নেন না?

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, ‘অমিতাভ বচ্চন বা উত্তম কুমারের মতো সুপারস্টার প্রার্থী হলে আলাদা কথা। নইলে এখানে যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তারা ভোটারদের খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেন বলে আমার মনে হয় না। তবে দলের প্রচারে তারকা প্রার্থীরা জৌলুস আনেন, দলের বক্তব্য বিপণনে সাহায্য করেন।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement

সকল