২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রভাববলয় বাড়াবে তুরস্ক

রজব তৈয়ব এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

তুরস্কের সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিনের ঘটনাবলি প্রকাশ পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন ঘটনাবলি সবারই জানা। রজব তৈয়ব এরদোগান তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকও হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে এরদোগানকে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে সেসবও সবার জানা। পুনরাবৃত্তিতে যাবো না। বরং একটি ভিন্ন পটভূমিতে আলো ফেলে দেখি কী কী বিষয় নজরে আসে। পটভূমিটি হলো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর দীর্ঘ ৬০০ বছরের পরাশক্তি তুরস্কের বৈশ্বিক ক্রীড়ামঞ্চ থেকে বিদায় এবং বর্তমানে সেই সঙ্কুচিত অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার বাস্তবতা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ওসমানীয় খেলাফতের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় এক অবমাননাকর চুক্তি (সেভ্রেস চুক্তি)। ১৯২০ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি অনুযায়ী পুরো সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশ ইচ্ছামতো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। তারা তুরস্ককে বিদ্রুপ করে ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’ বলে ডাকত। কিন্তু সেভ্রেস চুক্তি কার্যকর হবার আগেই তুরস্কে জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থান ঘটে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে। তিনি একের পর এক যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর দখল করা এলাকাগুলো উদ্ধার করতে শুরু করলে এক বছরের মধ্যে তারা নতুন করে আলোচনায় আসতে বাধ্য হয়। ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই স্বাক্ষরিত হয় নতুন চুক্তি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, গ্রিস, ইতালি, জাপান, রোমানিয়া ও যুগোস্লভিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত হয় লুজন চুক্তি। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা পায় আজকের তুরস্ক। তবে লুজন চুক্তিতেও তুরস্ককে এক ধরনের বশ্যতা মেনে নিতে হয়েছিল। অনেক এলাকা চিরতরে হাতছাড়া হয়। নিজের নৌপথের মালিকানা হারাতে হয় এমনকি অনেক অলিখিত শর্তও মেনে নিতে হয়। যেমন তুরস্ক নিজের ভূখণ্ডে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজও করতে পারবে না। গত ১০০ বছর ধরে এসব শর্ত পরিপালন করে এসেছে দেশটি। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে।
প্রথমত লুজন চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়েছে, দ্বিতীয়ত তুরস্ক নিজের শক্তিতে স্বাধীনভাবে নিজস্ব নীতি গ্রহণের মতো অবস্থায় পৌঁছেছে।

তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে কীভাবে নিজের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে তারও অনেক কিছু আমাদের জানা। আমরা জানি তুরস্ক এখন বিশ্ব ক্রীড়ামঞ্চে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইবে, বিশেষ করে যেটুকু তার প্রাপ্য বলে সে মনে করে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে এরই মধ্যে দেশটি অন্যতম খেলোয়াড়। কুর্দিদের বিষয়ে নিজস্ব নীতিতেই অটল থেকেছে এরদোগানের তুরস্ক। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করছে সব সময়। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের নেয়া নীতি তুরস্ক অনুসরণ করেনি। বরং রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে এমন এক ধরনের কূটনৈতিক বোঝাপড়া তৈরি করেছে যা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি করেও যুদ্ধবিমান না দেওয়ায় রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কিনেছে। আবার রুশ প্রভাবিত আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মধ্য এশিয়ার বিশাল অঞ্চলজুড়ে এক সময় তুরস্কের বিপুল প্রভাব ছিল। সেই প্রভাব এখনো আছে। এমনকি ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মতো ছোট একটি তুর্কি সংস্থাও সক্রিয়। একসময়ের তুর্কি প্রভাবিত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্ঘ অর্গানাইজেশন অব টার্কিক স্টেটস (ওটিএস) হলো সেই সংগঠন যেটিকে আগে টার্কিক কাউন্সিল বা তুর্কিভাষী রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা পরিষদ বলা হতো। ওটিএস-এর সদস্য দেশগুলো হলো আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুরস্ক এবং উজবেকিস্তান।

কিন্তু এর বাইরেও দক্ষিণ ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকায় তুরস্কের প্রভাব ছিল শত শত বছর। লুজন চুক্তির মেয়াদ শেষে তুরস্ক যে তার পুরনো প্রভাবাধীন এলাকায় প্রভাব ফিরে পেতে চাইবে সে বিষয়ে বিশ্লেষকদের সন্দেহ নেই। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশে আলোচনা কমই হয়েছে।

১৯ শতকে, রাশিয়া বলকান অঞ্চলে স্লাভিক পরিচয় আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল যা পরে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং জাতি-রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। তারপরে, ১৯১২-১৯১৩ সালের বলকান যুদ্ধের সময়, রাশিয়া সার্বিয়া এবং মন্টিনিগ্রোর আলবেনিয়ান অঞ্চলে সম্প্রসারণে সমর্থন দেয়। ১৯১২ সালে, আলবেনিয়া সার্বিয়ান দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইরত থাকতেই অটোমান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে যুগোস্লাভিয়া রাজ্যের জন্ম হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কমিউনিস্ট যুগোস্লাভিয়ার রূপ নেয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, যুগোস্লাভিয়া জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করলেও পাশ্চাত্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং তুরস্কের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

১৯৫৩ সালে, কমিউনিস্ট নেতা জোসেফ ব্রজ টিটো ১৯৩৮ সালের যুদ্ধ-পূর্ব দ্বিপক্ষীয় চুক্তিটি তুরস্কের সাথে পুনর্নবীকরণ করেছিলেন যা ১৯৫৩ এবং ১৯৫৯ এর মধ্যে যুগোস্লাভিয়া থেকে চার লাখ আলবেনিয়ান তথা মুসলিমকে বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়। সার্বিয়া এখনো আলবেনিয়ান-বিরোধী নীতি অনুসরণ করে যা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। সার্বরা কত ভয়ঙ্কর মুসলিমবিদ্বেষী তার পরিচয় তো জানা গেছে ১৯৯০ এর দশকে বসনিয়ায় তাদের নির্বিচার ও পৈশাচিক গণহত্যার ঘটনায়। সেই বিরোধিতার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত। এরদোগানের ভূমিকা এখানে কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে সেটাই দেখার।

গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির বিচার-বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাস দানের অন্যতম সেরা গণমাধ্যম জিআইএস রিপোর্টস অনলাইনের ২০২১ সালের একটি বিশ্লেষণের আলোকে আমরা দেখতে পারি কীভাবে তুরস্ককে বিশ^ পরিমণ্ডলের অত্যতম খেলোয়াড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। জিআইএস অবশ্য কেবল বলকান অঞ্চলে তুরস্কের স্বার্থ জড়িত আছে এমন অঞ্চলগুলোর বিষয়েই আলো ফেলেছে। বলেছে, বলকান অঞ্চলে তুরস্ক ও রাশিয়া সুদীর্ঘকাল ধরেই বড় খেলোয়াড়। এখনো সেখানে উভয় দেশের স্বার্থ আছে যা কিছুটা সাংঘর্ষিক কিছুটা অভিন্ন। বিংশ শতকের শুরুর দিকেও উভয় দেশ এই অঞ্চলটিকে নিজেদের প্রভাবের ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করেছে এবং এখন তারা সেখানে আবার ফিরে আসছে।

অভিন্ন পটভূমি
রাশিয়া এবং তুরস্ক উভয়েরই কৃষ্ণ সাগর এবং বলকান অঞ্চলে স্বার্থ রয়েছে। দু’টি অঞ্চলের সাথে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের এই ঐতিহাসিক সম্পর্কের সূত্র হলো বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং সেই সাথে আজারবাইজান। আর রাশিয়ার সম্পর্কের সূত্র আর্মেনিয়া ও সার্বিয়া।

ইতিহাসের ফিরে আসা
গত দুই দশকে দুই আঞ্চলিক শক্তি বলকানে ফিরে এসেছে। রাশিয়া এবং তুরস্ক উভয়ই প্রভাব বিস্তারের জন্য ধর্মীয় অনুভূতি (যথাক্রমে অর্থোডক্স খ্রিষ্টান এবং ইসলাম) ব্যবহারের পথ নিয়েছে। মস্কো সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোর মতো হার্ড পাওয়ার এবং স্পুটনিক ও রাশিয়া টুডের মতো মিডিয়া তথা সফট পাওয়ারের মাধ্যমে তার উপস্থিতি জোরদার করেছে। আর তুরস্ক প্রধানত বিনিয়োগ এবং রফতানির মাধ্যমে প্রভাব ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ভ্লাদিমির পুতিনের অধীনে মস্কো জর্জিয়া, ইউক্রেন এবং আজারবাইজানে (আবখাজিয়া, ওসেটিয়া, ক্রিমিয়া এবং নাগোর্নো-কারাবাখ) হস্তক্ষেপসহ তার নিকটবর্তী বিদেশী ভূখণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করে।

তুরস্ক ঐতিহাসিকভাবে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, কিন্তু ইউক্রেনীয় উপদ্বীপে রাশিয়ার সংযুক্তিকরণে আঙ্কারা জড়িত হয়নি। নাগার্নো-কারাবাখে, মস্কো এবং আঙ্কারা ছিল বিরোধী পক্ষে। তবে সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বজায় রেখেছিল। ফলস্বরূপ, ক্রেমলিনের তৈরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। এটি কার্যকরভাবে রাশিয়া এবং তুরস্কের আঞ্চলিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

জিআইএসের বিশ্লেষক বলছেন, বলকানে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একটি হটস্পট হয়ে উঠতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমপ্রধান বসনিয়া ঐতিহ্যগতভাবে তুরস্কের কাছাকাছি ছিল। রাশিয়ান-তুর্কি প্রভাবের লাইনে দেশটি আরো বিভক্ত হতে পারে।

আলবেনিয়া, কসোভো এবং উত্তর মেসিডোনিয়াতে এমন দৃশ্যমান ফল্ট লাইন নেই। আলবেনিয়া এবং উত্তর মেসিডোনিয়া উভয়ই ন্যাটোর অন্তর্গত এবং কসোভো এই অঞ্চলের সবচেয়ে আমেরিকানপন্থী দেশ, যার ভূখণ্ডে একটি ন্যাটো ঘাঁটি রয়েছে। মন্টিনেগ্রো আরো বিভক্ত। সার্বিয়ান এবং রাশিয়ানপন্থীরা নির্বাচনে জিতেছে, দেশটি ন্যাটোর অন্তর্গত এবং বর্তমানে এটি ইইউতে যোগদান নিয়ে আলোচনা করছে।

এ দিকে কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর অন্যতম ছিল তুরস্ক। আলবেনিয়া এবং উত্তর মেসিডোনিয়ার সাথেও এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ১৯৯৭ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তুরস্কও আলবেনিয়ান সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রধান রক্ষক ছিল। কসোভো ও আলবেনিয়ান সামরিক বাহিনীর কর্মীদের এখনো প্রশিক্ষণ দেয় তুর্কি মিলিটারি একাডেমি।

রাশিয়া এবং তুরস্ক পশ্চিমের সাথে তাদের মাঝে মাঝে উত্তেজনাপূর্ণ আচরণের ক্ষেত্রেও অভিন্ন অবস্থান নেয়। ২০২০ সালের গ্রীষ্মে, তুরস্ক এবং গ্রিস-উভয় ন্যাটো সদস্য-যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস বলেন, কোনো চুক্তি না হলে তার দেশ হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ করবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান ন্যাটো এবং ইইউকে তুরস্কের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণে বিরত থাকতে বলেন। তিনি ওয়াশিংটন এবং ব্রাসেলসের সাথে সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

বিপরীত কোণে
রাশিয়ার সাথে বেশ কিছু বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকার পরও উভয়ের মধ্যে গভীর পার্থক্যও আছে। রাশিয়া সাধারণত ন্যাটোর প্রতি বিরূপ। আর তুরস্ক ১৯৫১ সাল থেকে ন্যাটোর সদস্য। তুরস্কে ন্যাটোর ইনসারলিক বিমান ঘাঁটি রয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষে একটি পূর্বাভাসের তথ্য স্মরণ করতে পারি। হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক পূর্বাভাসদাতা, লেখক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে কৌশলবিদ জর্জ ফ্রিডম্যান ২০০৯ সালে একটি পূর্বাভাস দেন তার ‘The Next 100 Years : A Forecast for the 21st Century’ শিরোনামে লেখা একটি বইতে। এতে তিনি ২০৫০ সালে বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র কেমন হবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করেন।

বইয়ের একটি অধ্যায়ে জর্জ ফ্রিডম্যান ‘২০৫০ সালে তুরস্কের প্রভাবে বলয়’-এর একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। তাতে দেখানো হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে তুরস্কের প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে গ্রিস, সাইপ্রাস, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, জর্ডান, সৌদি আরব, ওমান, ইয়েমেন, উপসাগরীয় দেশগুলো, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ক্রিমিয়া, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাখস্তান।
বইটি এমন সময় প্রকাশিত হয়েছিল যখন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলুর অধীনে তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতি তথাকথিত ‘শূন্য-সমস্যা’ (zero-problem) বৈদেশিক নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা কমানো। এটি শুরু হয় আর্মেনিয়ান-তুর্কি প্রোটোকল চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এবং শেষ হয় আরব দেশগুলোর সাথে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক সুসংহত করার মধ্য দিয়ে।

এরই মধ্যে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। তুরস্ক দৃশ্যমানভাবেই ভূ-রাজনীতির অঙ্গনে নিজের অবস্থান জোরালো করার প্রয়াস পাচ্ছে। তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হবার পর এরদোগান যাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন সেই নিয়োগও একটি আভাস দেয়। এরদোগানের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এমআইটি) প্রধান ড. হাকান ফিদান।

এই হাকান ফিদান ইসরায়েলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদেরও আতঙ্ক। ২০১০ সালে তাকে এমআইটির প্রধান নিযুক্ত করা হলে ইসরায়েলের প্রধান দৈনিক হারেৎজ এক রিপোর্টে জানায়, ‘এই নিয়োগকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সংস্থা, বিশেষ করে মোসাদ, উদ্বেগের সাথে দেখছে।’ রিপোর্টে বলা হয়, এরদোগান, দাভাতোগলুর সাথে মিলে ফিদানই তুরস্ককে ইসরাইলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে ইরানের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছেন বলে প্রতিরক্ষা সংস্থা অভিযোগ করে। মোসাদের মতো দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার আতঙ্ক এই ফিদানকে এক সময় ‘আমার গোপন রক্ষক, রাষ্ট্রের গোপন রক্ষক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

সবচেয়ে বড় কথা, হাকান ফিদান টিকা (TIKA) নামে এমন একটি উন্নয়নবিষয়ক সরকারি সংস্থারও নেতৃত্ব দেন, যা বিভিন্ন টার্কিক রাষ্ট্র এবং আফ্রিকায় সক্রিয়। এছাড়াও সংস্থাটি অন্যান্য মুসলিম দেশে কাজ করে যেখানে তুরস্ক একটি আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম সভার পর এরদোগান বলেছেন, আমরা একটি ‘তুরস্কের শতাব্দী’ গড়ে তুলব।
তবে ফ্রিডম্যানের সব ধারণা বা আভাস যেসব সময় সত্য হয়েছে এমন নয়। তাই এরদোগান ও হাকান ফিদানের পরবর্তী পদক্ষেপ কেমন হয় আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকতেই পারি।

mujta42@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা হামাসকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলি প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান যুক্তরাজ্যের প্রথমবারের মতো সিরি-এ ম্যাচে ছিলেন সব নারী রেফারি ফেনীতে তাপদাহে তৃষ্ণা মেটাতে শিবিরের পানি-স্যালাইন বিতরণ ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাংলাদেশে যাদের ইলমে দীন অর্জনের সৌভাগ্য হয়েছে, তারাই প্রকৃত ধনী ৩৩ ইসরাইলির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ৪০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব ইসরাইলের ‘টেকসই প্রস্তাব’ কী হবে হামাসের প্রতিক্রিয়া উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের রাত ১১টার মধ্যে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া কি হোঁচট খেল?

সকল