২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বৃষ্টিদিনের কদম ফুল

-

বর্ষা! নামটা শুনলেই মনের ভেতর আনন্দ খেলা করে। আর যদি কদম ফুল দেখি! তাহলে তো কথাই নেই। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। কদম আর বর্ষার বৃষ্টি একাকার হয়ে উজ্জীবিত করে। স্নাত করে শুকনো মনের অনুভূতি। ফুরফুরা হয় মন। মৃদুমন্দ সুশীতল হাওয়াও কম না! ঝিরঝিরে ঠাণ্ডার সুঘ্রাণে মন মাতিয়ে রাখে। কদম ফুলের সাদা বসন এই বাতাসই বেশি নারায়। আর যদি ভেজা কাক বসে সেই ডালে! কেমন লাগবে? আহা! দারুণ। শরীর ও লেজ একটু একটু নারে। আর ডানা-পাখনা! ডানা ঝাপটালে মনে হয়, কাক আনন্দে হাততালি দিচ্ছে। তাই অনায়াসেই এই কথা এভাবেই বলছিÑ
বৃষ্টি ঝরেÑ
সকাল দুপুর টাপুর টুপুর
টিনের ঘরের চালে
কাউয়া বসেÑ
শরীর নাড়ে পাখনা ঝাড়ে
কদম ফুলের ডালে।
হ্যাঁ, সত্যি! এই দৃশ্যই বলে দেয় বর্ষার সৌন্দর্য। আহা কি সুন্দর সেই দৃশ্য। সব মানুষই সে মুগ্ধতায় ভোগে। বেশি আনন্দ করে কম বয়সীরা। আর শিশু! তারা তো মাতোয়ারা। দুরন্ত শিশুরা বানরের মতো মুহূর্তেই উঠে যায় কদমের ডালে। গালেও তখন আনন্দের হাসি টোল এনে দেয়। হাতে করে নিয়ে আসে অসংখ্য কদম ফুল। সাথে থাকে ডাঁটা কখনো থাকে দু-একটি কচি পাতাও। একসাথে এই ফুলগুলো এক দারণ দৃশ্য তৈরি করে। যেন নতুন বছরের মতো বর্ষাকেও তারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তখন কেন জানি মনে হয় বর্ষাটা শিশুদের নববর্ষ। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীও এই ফুলে পাগল হয়। আহা কি আনন্দ ঝিরঝিরে বাতাস। কিশোরীরা দু’কানের ফাঁকে কখনো কদম ফুল গোঁজায়। বাংলার খাঁটিত্ব ফুটে ওঠে। বলতে হয়Ñ এরা বাংলার নির্ভেজাল মাটির কিশোর-কিশোরী।
শিশু কিশোরের এই আনন্দ বাংলার সাহিত্যও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। যথেষ্ট প্রয়োগ ও প্রচেষ্টাও লক্ষ করা যায়! কদম ফুল নিয়ে রচিত হয় গ্রামবাংলার কিছু ছড়া কবিতা। যেমনÑ
চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে
কদম তলায় কে
হাতি নাচে ঘোড়া নাচে
সোনা মনির বিয়ে।
কদম গাছের তলে এখনো শিশুরা জড়ো হয়। কদম ফুল দিয়ে খেলে নানান রকম খেলা। ভাটি গায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই দৃশ্য দেখা যায়। কখনো কদমের পাপড়ি ছিঁড়ে একে অপরের মাথায় দিয়ে আনন্দ করে। করে শুভেচ্ছা বিনিময়ও। তখনই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে হেসে ওঠে শিশু-কিশোর। এই রকম আমিও কত আনন্দ শুভেচ্ছা করেছি। কেউ মজা করে বলে ফুল কিনবেন ফুল? আমিও তা গ্রহণ করি। আসলে ফুল মূল বিষয় নয়, হাসি বা আনন্দ পাওয়ার জন্যই গ্রহণ। কখনো আনন্দে আপ্লুত হয়ে কিছু টাকাও দেই। এটা গ্রামে হঠাৎ হলেও শহরে এর চিত্র ভিন্ন! এ সময় ছিন্নমূল শিশুরা কদম ফুল বিক্রি করে। বিক্রি করে তাদের জীবন-জীবিকার জন্য। আহা! এই কথা মনে হলে কষ্ট হয়। ওদিকে যাচ্ছি না।
কদমের সাদা পাপড়ির পরেই দেখা যায় হলুদ পাপড়ি। এটা এতই বেশি দেখা যায় যে, এর জন্যই কদম ফুলের আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। এটাকে কখনো সোনালি কালার মনে হয়। এটাও ঠিক যে সোনালি কালারের কদম ফুল আছে। এই সোনালি রঙের প্রেমে পড়েই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেনÑ
দোলে শিহরে কদম
বিদায় কেয়া
নামিলো দেয়া।
এ ফুল আমাদের দেশের সব এলাকায় দেখা গেলেও এর আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে, চীন ও মালয়ে। কদম নীপ নামেও পরিচিত। এছাড়া বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর সব নাম রয়েছে কদমের।
ছোট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতরভাগে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে অসাধারণ হলেও এর আর্থিক মূল্য খুব কম। কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরি করা যায় না। কাঠ দিয়ে দেয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে।
শুধু সৌন্দর্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। কাঠ দিয়ে কাগজ, দেয়াশলাই ছাড়াও তৈরি হয়ে থাকে বাক্সপেটরা। আর কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে থাকলেও নাগরিক উঠোনে সেই কদমের ঘ্রাণ অনেকটাই যেন অতীত। আষাঢ়ে বৃষ্টি তো ছুঁয়েছে বৃক্ষ। তবে সেই রিমঝিম জলে কদমের কোমলতা যেন খুঁজে পাওয়া ভার।
কদমের বৈজ্ঞানিক নাম অহঃযড়পবঢ়যধষঁং রহফরপঁং. ইংরেজি নাম নঁৎভষড়বিৎ ঃৎবব.

 


আরো সংবাদ



premium cement