সুমি খাতুন। বর্তমান বয়স ২৬ বছর। অভাবের কারণে অল্প বয়সেই বিয়ে করতে হয়েছিল তাকে। স্বামী আবু মুসা চায়ের দোকানে কাজ করেন। দুই মেয়েসহ মুসা-সুমি দম্পতির চারজনের সংসার। তারা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার (কলেজ পাড়া) এলাকার বাসিন্দা।
স্বামীর সামান্য আয়ে চারজনের সংসার চলে না। তাই অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতেন সুমি। ছেলে সন্তান লাভের আশায় সুমি খাতুন তৃতীয়বারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। করোনার প্রভাবে চায়ের দোকান বন্ধ হয়ে গেলে তার স্বামীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় গর্ভে সন্তান নিয়ে সুমি মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে সংসার চালাতেন।
সম্প্রতি তার সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসে। ডাক্তার তাকে ৬ আগস্ট আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেয়। কিন্ত আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর সেই সামান্য টাকাটাও তিনি সংগ্রহ করতে পারেননি। পারবেন কী করে! একদিকে স্বামীর আয় রোজগার বন্ধ অন্যদিকে তার শরীর অসুস্থ, কাজে যেতে পারেন না। সুস্থ অবস্থায় যাদের বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন আর্থিক সাহায্যের জন্য তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কারোর কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। এদিকে প্রসবের সময় পেরিয়ে গেছে। নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব হবে না বুঝতে পেরে বাড়িতে শুয়ে শুয়ে দিন কাটিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তিনি। একটা প্রবাদ আছে রাখে আল্লাহ, মারে কে?
সুমির শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে প্রতিবেশী কোহিনুর বেগম সুমির চিকিৎসার অর্থ যোগাতে এগিয়ে আসেন। অন্য প্রতিবেশীদের নিকট অর্থ সহায়তা কামনা করেন। এরই একপর্যায়ে কোহিনুর বেগম বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন ডোনেট ফর ভূরুঙ্গামারীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আশিকুর রহমান আশিকের মায়ের সাথে। সামান্য কিছু টাকার অভাবে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে মায়ের মুখে এমন আফসোস শুনে আশিক বিষয়টি অবগত করেন ভূরুঙ্গামারী উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফখরুজ্জামান জেট ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েমকে।
দুজনেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে ভর্তি করতে বলেন টাকার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পরামর্শে তাৎক্ষণিক রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে পরিক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় নরমাল প্রসব সম্ভব নয়। রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুব ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সুমি খাতুন একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার ও প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় রোগীকে ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছিলো। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন।
সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় বেঁচে গেল দুটি প্রাণ। প্রমাণিত হলো টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। জয় হলো মানবতার।