করোনা সন্দেহে মৃত্যুবরণ করা পোশাকশ্রমিক মৌসুমী আক্তারের লাশ নিজ গ্রামে দাফন ও তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু নেওয়াজ নিশাত। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বৃহসপতিবার দুপুরে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবী জানান।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহে মৌসুমী আক্তারের (২২) লাশ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ। মৌসুমী পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে। তিনি গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। গত ২১ মে একটি ট্রাকে মৌসুমী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু পথিমধ্যেই তিনি মারা যান। পরে তার লাশ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। মেয়ের বাবা গোলাম মোস্তফার অভিযোগ বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু নেওয়াজ নিশাতের কাছে মোবাইল ফোনে মেয়ের লাশ এলাকায় দাফন করতে চাইলে তিনি লাশসহ তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হলে মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা ও সমালোচনা।
আলম হোসেন নামে একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক নারীর লাশ তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগ করে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান্ । আলাউদ্দিন সুমন নামে আর একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন গোলাম মোস্তফা মৃত মৌসুমীর আসল বাবা নন। মৌসুমীর জন্মদাতা পিতা অন্যজন। সেখানে জার্জিস চৌধুরী নামে একজন মন্তব্য করে বলেন আসল বাবা কিনা? এটা বড় ব্যাপার নয়। ঘটনার সাথে সেই মানবতার ফেরিওয়ালা কিনা? সেটাই দেখা উচিত। যেই জড়িত থাক তার বিচার হওয়া দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবু নেওয়াজ নিশাত বলেন, গত ২২ মে মৌসুমীর মা সাহেরা খাতুনের কাছ থেকে আমি মৃত্যুর সব কিছু অবগত হওয়ার পর আমি সফিকুল নামে এক ট্রাকড্রাইভারের মাধ্যমে মৌসুমীর ট্রাকের ড্রাইভার আজিজুলের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বিষয়টি রংপুরের তাজহাট থানায় জানাতে বলি এবং এ ব্যাপারে আমি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্তর সাথে কথা বলি। তিনি বলেন মেয়ের মায়ের নিকট রংপুরে কাউকে পাঠানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আমাকে মৌসুমীর বাবা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করে তার লাশ বুড়িমারীতে নিয়ে আসতে বলি। শুধু তাই নয় পরিবারের সাথে কথা বলে আমি লাশ দাফনের স্থানও নির্ধারণ করি।
তিনি বলেন, কিন্তু তাজহাট থানায় লাশের ওয়ারিশ না থাকায় এবং ২৩ মে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ বাবার কাছে হস্তান্তরে দেরী হয়। এর পর অনেক চেষ্টা করেও মেয়ের বাবার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাইনি। এর মধ্যে গত ২৪ মে জানতে পারি মৌসুমীর লাশ তিস্তা নদীতে পাওয়া গেছে এবং লাশ আদিতমারী থানায় আছে।
নিশাত বলেন, এর মধ্যে হঠাৎ ঈদের দিন টিভিতে একটি সংবাদে জানতে পারি আমি নাকি হুমকি দিয়ে এলাকায় মৌসুমীর লাশ আনতে নিষেধ করেছি। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়ষন্ত্রমূলক। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে মৌসুমী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে সন্দেহ করা হলেও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায়। ফলে তার মৃত্যূ নিয়ে নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তবে পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যাবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা গোলাম মোস্তফার গুচ্ছগ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্তর সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান ঘটনার দিন চেয়ারম্যান নিশাত তার সাথে দুপুরে ফোনে এ রকম একটি লাশের বিষয় জানালে আমি তাকে বলেছি লোক বা লাশ যেখানকার হোক ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেই এলাকার থানা পুলিশ বিষয়টি দেখবে আর আমার এলাকায় যখন আসবে তখন আমরা দেখব। চেয়ারম্যান কর্তৃক মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফাকে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।