রেল স্টেশনে ট্রেন সাধারণত সময়সূচী অনুযায়ী আসা-যাওয়া করে। যাত্রীরা সে অনুযায়ী স্টেশনে উপস্থিত হন। কিন্তু এদেশেই এমন একটা স্টেশন আছে যেখানে ট্রেন কখন আসে-যায় কেউ জানেনা।
নওগাঁ আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশন এলাকাবাসির কাছে স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। জনবল সংকটের কারণে স্টেশনের কার্যক্রম প্রায় এক দশক ধরে বন্ধ থাকায় এক দিকে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে অপর দিকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রেলের মূল্যবান সম্পদ। পাশাপাশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এই স্টেশনে চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী রকেট মেইল এবং পারবর্তীপুর থেকে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনা রকেট মেইল নামের ৩টি ট্রেনের স্টপেজ বহাল থাকলেও ট্রেন ৩টি কখন আসে কখন যায় অনেকেই জানতেই পারে না। ফলে স্টেশন থেকে চলাচলরত যাত্রীরা নির্ধারিত সময় জানতে না পেরে বাধ্য হয়ে ট্রেন ধরার জণ্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করে অপেক্ষা করতে হয়।
সূত্র জানায়, সাবেক বৃটিশ সরকার শাসনামলে আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা স্টেশন সংলগ্ন এলার জনসাধারণের চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সে সময় থেকেই এখানে লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলোর স্টপেজ কার্যকর ছিলো। সেই সাথে টেন ক্রসিংয়ের জন্য এখানে প্রতিস্থাপন করা হয় ডবল লাইন। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জাম দেয়া হয়। ট্রেনগুলোর যাত্রা বিরতীতে এলাকার হাজার হাজার জনগণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে থাকে। সেই সাথে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়তে থাকে। শাহাগোলা ওই অঞ্চল একটি বানিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় সেখান থেকে প্রতিদিন ট্রেন যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মালামাল পরিবহণ করে রেলের আয় হতো অনেক। কিন্তু গত প্রায় এক দশক আগে এ স্টেশন থেকে প্রয়োজনীয় জনবল প্রত্যাহারসহ রেল ক্রসিং ব্যবস্থা ও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিনের পর দিন অকেজো হতে থাকে স্টেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা।
বর্তমানে স্টেশনটিতে ৩টি ট্রেনের স্টপেজ থাকলেও কখন আসে কখন যায় তা কেই বলতে পারে না। সরেজমিন দেখা গেছে, প্লাটফরমের ইট ঊঠে গিয়ে গোটা প্লাটফরম ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। প্লাটফর্মের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। সামান্য বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে যায়। ফলে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা নামার জন্য প্লাটফরম ব্যবহারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়াও সেখানকার টিকিট ঘরের বারান্দার টিন উধাও হয়ে গেছে।
মূল ঘরের টিনগুলো একে একে খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ঘরে ছাতা হাতে বসে থাকতে হয়। যাত্রীদের বসার স্থান, শৈাটাগারসহ সব স্থাপনাগুলোই প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শাহাগোলা গ্রামের শামসুল হক জানান, এই এলাকা একটি বানিজ্যিক কেন্দ্র। এক সময় এখান থেকে ট্রেন যোগে আমরা ধান-চাল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন করতাম। তখন এই স্টেশন ছিলো জাঁকজমকপূর্ণ। বর্তমানে রেলের কোন লোক এখানে নেই। এজন্য মালামালও পরিবহন করা যায় না। আর রেল ও তেমন রাজস্ব পায় না। সেই সাথে স্টেশনটি সচল না থাকায় রেলের অনেক মূল্যবান আসবাবপত্র ও বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসির দাবি এ স্টেশনটি পুনরায় সচল করলে আবারো তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। এবং ফিরে আসবে স্টেশন এলাকার প্রাণচাঞ্চল্য।
এব্যাপারে সাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাষ্টার আব্দুল জব্বার জানান, এখানে যে কয়টি ট্রেনের স্টপেজ আছে তার জন্য তো কর্মচারির দরকার। আমাদের কোন কর্মচারি নেই। অফিসে পূর্ণ স্টাফ নেই, রেল ক্রসিং, স্টেশনে প্লাটফরম, যাত্রী ছাউনি, থাকার বিল্ডিং পুণনির্মাণ করলে আবারো ফিরে পাবে এই স্টশেনের হারানো ঐতিহ্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা