২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনা পজিটিভ মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা

পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যাংক কর্মকর্তা

-

মায়ের প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করলেন ঝালকাঠি কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান। গত শনিবার বিকেলে নিজের শরীরের সাথে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে নিজের অসুস্থ মাকে নিয়ে নলছিটি থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে এসেছেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। সড়কে মোটরসাইকেলে এমন দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়েছেন অনেকে। মোবাইল ফোনে ছবি তুলে বিষয়টি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কেউ কেউ।
জিয়াউল হাসান বলেন, কোনো উপায় না পেয়ে অসুস্থ মাকে এভাবে অক্সিজেন দিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার বাড়ি থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে।
জিয়াউল হাসান বলেন, আমার মা রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। প্রায় ১০ দিন ধরে মায়ের শরীরে জ্বর দেখা দেয়। তাই এক সপ্তাহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মায়ের শরীর থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নমুনা দেই। কিন্তু সেই পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পাইনি।
এ দিকে মায়ের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে এসে নমুনা দেই। আর নমুনা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাই বাড়িতে। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট গত রাতে পেয়েছি, যা করোনা পজিটিভ।
তিনি আরো বলেন, শনিবার সকাল থেকে অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেয়া শুরু করি। এ দিকে নলছিটিতে চিকিৎসকদের তেমন কোনো সহায়তা না পেয়ে বরিশালে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা থ্রি হুইলারও ম্যানেজ করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে আমার মোটরসাইকেলে মাকে নিয়ে রওনা দেই। সেই সময় কোনো ধরনের রিস্ক না নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে পিঠের সাথে সিলিন্ডারটি বেঁধে মায়ের মুখে মাস্কটি লাগিয়ে কৃত্রিম অক্সিজেন সিস্টেমও চালু রাখি।
তিনি বলেন, আমার বড় ভাই মেহেদী হাসান খুলনাতে পুলিশের চাকরি করেন, বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ছিল। সে আরেকটি মোটরসাইকেলে চেপে আমার পাশে পাশে সারা পথ এসেছে। তখন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল যে, মাকে যেভাবেই হোক হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে, অন্য কিছু মাথায় আনিনি।
হাসপাতালে আসার পথে পুলিশের চেকপোস্টে বেশ কয়েক জায়গাতে দাঁড়াতে হয়েছে, তাও আবার ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে হেলমেট না থাকায়। তবে পুলিশ সদস্যদের খুলে বলার পর ছেড়ে দিয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মেট্রো পুলিশের সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডারটি দেখতে পেয়েই আমাকে ছেড়ে দেয়।
জিয়াউল হাসান আরো বলেন, হাসপাতালে আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে সাহায্যের জন্য বলে রেখেছিলাম। তাই আসার সাথে সাথে মায়ের জন্য একটি বিছানা পেয়ে গেছি। আমার মায়ের চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement