১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি
-


ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য যে আইন করা হচ্ছে সেটি নিয়ন্ত্রণমূলক হওয়ার ঝুঁকি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আইনটি যেন নিয়ন্ত্রণমূলক না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জারিয়েছে সংস্থাটি। আইনটির সুপারিশমালায় সংস্থাটি বলছে, ব্যক্তিগত তথ্য ফোকাস করার সুযোগ এতে সঙ্কীর্ণ। এ ছাড়া তথ্য স্থানীয়করণের বিধান সংশোধন বা সম্পূর্ণ অপসারণ করা প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেই এই স্থানীয়করণের বিধান থেকে সরে আসা প্রয়োজন বলে সংস্থাটি মনে করে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে গতকাল টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘খসড়া ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অ্যাডভাইজার ড. সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের ডিরেক্টর মোহাম্মদ তাওহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আইনের পর্যালোচনা তুলে ধরেন আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম। তিনি বলেন, এই আইনে আমরা অধিকারভিত্তিক দিকনির্দেশনা দেখতে চাই। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বা মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করতে এই আইন প্রয়োজন। অপব্যবহারের জন্য যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার, এই আইনটিও যেন সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনে ব্যক্তিগত উপাত্তের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা থাকা উচিত। এর জন্য যে ডেটা সেন্টার, তা নির্মাণে সবসময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা শীতল স্থান প্রয়োজন। সেই সুবিধা বাংলাদেশে কতটুকু? যেখানে এখনো বাংলাদেশ নিজেদের বিদ্যুৎ ঘাটতিই মেটাতে পারেনি। এ ছাড়া তথ্য সুরক্ষায় এটার জন্য ডেটা সেন্টার দেশে তৈরির বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। সেটি বাইরে হওয়াটাই উত্তম, তাতে আন্তর্জাতিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, এরই মধ্যে সরকার জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। এটা ঠিক যে আইনে অনেক ভালো দিক আছে, তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেমন ভালো দিকের তুলনায় খারাপটা আমরা বেশি দেখেছি, এটা এভাবে হলে এখানেও ঠিক তাই হবে। আর ডেটা প্রটেকশন অফিসার, ট্রেনিংপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ দেশে নেই। তিনি বলেন, আইনে সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে যে, সরকার নিয়ম পালন করছে কি না সেটা তদারকি করা। এটি পৃথিবীর কোনো দেশেই সম্ভব না, বাংলাদেশে তো একেবারে অবাস্তব। তাহলে তো আমাদের দেশে দুর্নীতি থাকত না। মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকার তার সবকিছুর সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পেতাম। অর্থাৎ আমি এমন একটি আইন করছি যেখানে সরকারি অথোরিটি সরকারকে বলে দেবে যে সরকার ঠিক করছে কি না! যে প্রতিষ্ঠানে বাজেট দেবে সরকার, লোকোবল দেবে সরকার, যে প্রতিষ্ঠান সরকারের সার্ভিস রুলস দ্বারা পরিচালিত, সেই প্রতিষ্ঠান সরকারের আইন মেনে সরকার ডাটা প্রটেকশনের কাজ ঠিকমতো করছে কি না সেটার জাজমেন্ট দেবে। এটা অবাস্তব, এটা পরিবর্তন করতে হবে।

নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা চাই মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা যেন আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে এই আইন করা হয়েছে, আমরা চাই আমাদের দেশের আইনেও সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকুক। বিশেষ করে কোনটিকে আমরা ব্যক্তিগত তথ্য বলছি বা কোনটিকে ব্যক্তিগত তথ্য বলছি না, আইনে সেই বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, এখানে অংশীজনের সংখ্যা অনেক। তাই অংশীজনদের সাথে নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে আইনটিকে যথাযথভাবে ঢেলে সাজানো দরকার। আমরা বলতে চাই ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক, যেটা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের বিশ্লেষণে ব্যক্তিগত তথ্যে ব্যক্তি বলতে কী বোঝানো হয়েছে সেটি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি যেন নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যক্তিগত তথ্যে সরকারের প্রবেশের অধিকার থাকে, তবে শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে এই প্রবেশাধিকার জুডিশিয়ারির মাধ্যমে হতে হবে। তিনি বলেন, আইনের জন্য স্পষ্টভাবে ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত তথ্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া এটি নির্মাণে ডেটা সেন্টার নির্মাণ ও স্থানীয়করণের জন্য আমরা প্রস্তুত নই এবং আমাদের অবকাঠামোগত দুর্বলতাও আছে। মূলত আমরা যে বিষয়গুলো উল্লেখ করলাম, সরকার যদি এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয় তাহলে আশা করছি আইনটি যেভাবে আছে তার চেয়ে আরো ইতিবাচক হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য যে আইন করা হচ্ছে সেটি নিয়ন্ত্রণমূলক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, আমরা সেটি চাই না।


আরো সংবাদ



premium cement