১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


ইউসিবির সাথে একীভূত হবে না ন্যাশনাল ব্যাংক

পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক
-


সবলের সাথে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণের প্রক্রিয়া থেকে আপাতত পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাধ্যতামূলকভাবে কোন সবল ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত হতে বাধ্য করবে না। একই সাথে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে সে বিষয়েও ব্যাংকগুলোর পর্ষদ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত না নিলে তারা বাধ্য করবে না। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু করবে না। আর এর রেশ ধরেই ইউসিবির সাথে একীভূত হবে না ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির শনিবারের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ইউসিবির সাথে একীভূত হওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে নেয়া হয়নি। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও তাদেরকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে তিনি বলেন, জনগণের আমানত সুরক্ষা করতে প্রয়োজনীয় যেকোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পিছপা হবেন না। তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক নিজেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। মার্জার হওয়ার কোনো পরিস্থিতি তাদের সৃষ্টি হয়নি। আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যাংকটি চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে জোর চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এ দিকে মার্জার হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার সংবাদ আসায় হঠাৎ আমানত প্রত্যাহারের চাপ বেড়ে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজের স্পৃহা কমে গেছে। অনেকেই আতঙ্কিত। এটা চলতে থাকলে আর্থিক ভিত্তি দুর্বল থেকে আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। আর এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সাম্প্রতিককালে সবলের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে সংবাদ বের হওয়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, একীভূত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাংকের বড় বড় আমানতকারীকে চিঠি দিয়ে আমানত তুলে নেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। এতে আমাদের তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এক দিকে আমানতকারীদের চাপ অপর দিকে প্রভাবশালী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের চাপ সবমিলেই বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবস্থান থেকে সরে আসছে। ইতোমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে, নতুন করে আর কোনো দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করা হবে না। সংস্থাটি বলেছে, যেগুলোর বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ওইগুলোর ফলাফল দেখে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকে আমানত কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানত বেশি তুলে নেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সামল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত নতুন করে বাধ্যতামূলকভাবে আর কোনো ব্যাংককে অন্য কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূতকরণ করবে না।
সূত্র জানায়, আগে থেকে কোনো আলোচনা না করে হঠাৎ গত ৯ এপ্রিল ইউসিবির সাথে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়। এতে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। এর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মীরাও আন্দোলন শুরু করে। ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়নি। ফলে আপাতত ন্যাশনাল ব্যাংক ইউসির সাথে একীভূত হচ্ছে না।
পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাংকটিকে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আবার জোরালো পদক্ষেপ নেবে। এর মধ্যে ঋণ আদায় জোরদার করবে। বিশেষ করে শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায়ে ঋণ আদায়ে জোর দেয়া হবে। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্তরে ঋণ আদায়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের জন্য দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (পিসিএ) নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আলোকে একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধন পরিস্থিতি, ব্যবস্থাপনা ও তারল্য পরিস্থিতি এই চারটি সূচকের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধের চূড়ান্ত পর্যায়ে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে মার্চ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এক করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এরপর গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক কিভাবে একীভূতকরণ করা হবে সে বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা অনুসরণ না করে কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এভাবে চাপিয়ে দেয়া নিয়ে ব্যাংক খাতে সমস্যার সৃষ্টি হয়।


আরো সংবাদ



premium cement