৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি! ভেতরে ভেতরে গুঁড়িয়ে গেছে জার্মান দল?

ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি! ভেতরে ভেতরে গুঁড়িয়ে গেছে জার্মান দল? - ছবি : সংগৃহীত

যেটা আশঙ্কা ছিল, সেটাই ঘটল। একটা দল জিততে থাকলে তাদের ভুলত্রুটিগুলো যেমন চোখে পড়ে না, তেমন ভেতরে ভেতরে কোচ–‌ফুটবলারদের মধ্যে মনোমালিন্য থাকলে তা সামনে আসে না। সেটা বোঝা যায়, দল গাড্ডায় পড়লেই। যেমন এবার এখানে পড়েছে জার্মানি রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর কাছে হেরে। কোচ ও ফুটবলাররা পরস্পরের দোষারোপের রাস্তায় হাঁটা শুরু করলেন। বলতে অসুবিধা নেই, প্রথম ম্যাচে হারার পর জার্মানির সমর্থকেরা মস্কো–সহ বিভিন্ন জায়গায় যখন হতাশায় গন্ডগোল বাঁধিয়েছেন, তখন জার্মানির ফুটবল শিবিরেও ঝামেলার ইঙ্গিত মিলেছে। এটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা জার্মানির। সুইডেন ম্যাচ খেলতে নামার আগে।

এর আগে জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো–র মুখে কখনো ফুটবলারদের পারফরমেন্স নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করতে শোনা যায়নি। কিন্তু মেক্সিকোর কাছে হারের পর লো একবারও নিজের কাঁধে ব্যর্থতার দায় তুলে নেননি। বরং তিনি আগাগোড়াই দুষেছেন তার ফুটবলারদের। ফুটবলাররা পরিকল্পনামাফিক খেলতে পারেনি বলেই ডুবেছে দল, এটাই লো–র সাফাই। এটা ফুটবলারদের কানে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে সরাসরি কোচের নাম করে কিছু না বললেও দলের দুই অভিজ্ঞ ফুটবলার ম্যাটস হামেলস ও টনি ক্রুজ ঘুরিয়ে কোচ লোর স্ট্র‌্যাটেজির সমালোচনা যেমন করেছেন, তেমন সতীর্থদের একহাত নিয়েছেন, নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায়।

হামেলসের মতে, ‘‌প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা মোটেই ভালো খেলিনি। এ নিয়ে আমি টিম মিটিংয়ে সকলকে সতর্ক করেছিলাম। কেউ কানেই তোলেনি আমার কথা। সে–কারণে এখন ভুগতে হচ্ছে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ২–‌‌১ গোলে জিতলেও, ওটা আমাদের সেরা খেলা ছিল না। সেদিন উতরে গেলেও দলের বাকিদের (‌কোচ লোসহ)‌ বলেছিলাম, এভাবে খেললে বিশ্বকাপে সমস্যা হবে। কারণ বিশ্বকাপে আমাদের গ্রুপে সৌদি আরবের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আছে। সৌদি ম্যাচের মতোই সাদামাটা খেলে ডুবলাম। আগেই বলেছিলাম, আমরা খুব সহজেই প্রতিপক্ষের পায়ে বল জমা দিচ্ছি। পাসিংয়ে ত্রুটি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, কভারিং ঠিক হচ্ছে না। এতে প্রতিপক্ষ দলের সমানে আক্রমণ হানার অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে। দুর্ভাগ্য, আমরা ওই বিষয়ে আমল দিইনি। তাতেই মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে আমাদের খেলা এত খারাপ লেগেছে।

ওদের ঘাড়ে চেপে বসার সুযোগ করে দিয়েছিলাম আমরাই। যা খেলেছি, তাতে মেক্সিকোর জেতারই কথা। অথচ আমরা জানতাম মেক্সিকো কেমন খেলে। সেভাবে তৈরি হলে এই সমস্যা হত না। আমাদের অ্যাটাকিং কোয়ালিটি অনুযায়ী সাত–আটজন একসঙ্গে আক্রমণে গেলে প্রতিপক্ষ চাপে পড়ে।কিন্তু মেক্সিকোর বিরুদ্ধে সেই ঝাঁজটাই ছিল খেলায় ছিল না। তাতেই মেক্সিকো বারবার প্রতি আক্রমণে এসেছে। এই সময় ডিফেন্সে সঠিক কভারিং ছিল না। আমার আর বোয়েতাংয়ের পাশে কাউকে দেখছিলাম না। এতে দুটো উইং দিয়ে মেক্সিকোর ফুটবলাররা হু–হু করে আক্রমণ হানার সুযোগ পেয়েছে। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হারটা আমাদের কাছে দেরিতে ঘুম ভাঙার মতো। এখন পরপর দুটো ম্যাচ না জিতলে বিপদ আছে। হয়তো বিশ্বকাপে আমাদের অভিযান শেষ হয়ে যাবে প্রথম রাউন্ডেই।’‌

হামেলসের মতো টনি ক্রুজও সরব দলের খেলা নিয়ে। বলেন, ‘প্রথমার্ধে খেলাটা ধরতেই পারিনি আমরা। ঢেউয়ের মতো বারবার ধেয়ে আসা মেক্সিকোর আক্রমণ সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি নিজেদের সেরা দূরে থাক, স্বাভাবিক খেলা তুলে ধরতে না পারায়। এত ভুল সাম্প্রতিককালে আমাদের খেলায় হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আমরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে খেলায় ফিরেছিলাম। মেক্সিকো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। গোলের সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু ফায়দা তুলতে পারিনি। অন্তত একটা গোল আমাদের করা উচিত ছিল। এখন নিঃসন্দেহে আমরা চাপে। পরের দুটো ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট পেতেই হবে বিশ্বকাপে টিকে থাকতে।’‌ দুই ফুটবলার যা বলেছেন, এতে দলগত সংহতির সত্যনাশ হলে বলার কিছু নেই। আর তার জেরে পরের সুইডেন ম্যাচ না জিতে বিশ্বকাপ থেকে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ছিটকে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

সাম্প্রতিক কালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত চার বিশ্বকাপে তিন চ্যাম্পিয়ন দল প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারেনি। ২০০২–‌এ ফ্রান্স, ২০১০–‌এ ইতালি, ২০১৪–‌এ স্পেন। এবার কি তবে জার্মানি এমন একটা অকাল বিদায়ের মুখে পড়তে চলেছে?‌ সেটা অবশ্য সময়ই বলবে। ’‌৮২–তে আলজিরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম রাউন্ডে শেষবার হেরেছে জার্মানি বিশ্বকাপের আসরে। তারপর এবার মেক্সিকোর কাছে হার। এটা একটা অশনিসঙ্কেত মনে করছেন অনেকেই। জার্মানির কোচ লোর কাছেও প্রশ্নটা রেখেছিল সংবাদমাধ্যম। তাহলে ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনের মতো এবার রাশিয়ায় প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিতে হবে না তো জার্মানিকে?‌ লো অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতেই বলেছেন, ‘আপনাদের হয়তো মনে আছে, ৮২–তে প্রথম ম্যাচ হেরেও জার্মানি শেষপর্যন্ত ফাইনাল খেলেছিল। এবারও জার্মানি প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকে নকআউটে খেলবে।’‌

শেষ ষোলোয় প্রতিপক্ষ ব্রাজিল বা কে হবে, তা নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না লো। তাঁর সাফ কথা, আগে লক্ষ্য প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকানো, তারপর শেষ ষোলো নিয়ে ভাবার অনেক সময় মিলবে। ম্যাচ শেষে লো বলেইছেন, ‘প্রথম ম্যাচ হেরে আমরা চাপে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে গেলে এমন চাপ নেয়ার জন্য ফুটবলারদের তৈরি থাকতে হয়। জার্মানি এর আগেও এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এবারও পারবে। তার জন্য সবার আগে দরকার প্যানিক না করে, পরস্পরের দিকে দোষারোপের আঙুল না তুলে, কোনো কিছু না বদলে আগের পরিকল্পনামতোই মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলা। সুইডেন কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের বিরুদ্ধে জিততে মেক্সিকো ম্যাচের ভুলের পুনরাবৃত্তি চলবে না। ফুটবলাররাও বুঝছে, এই মুহূর্তে ওদের কী করতে হবে। আমিও ওদের সঙ্গে আলোচনা করব ম্যাচের আগে।’‌

২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে দেল বস্কের স্পেন প্রথম ম্যাচেও হেরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এখন দেখার, লোর জার্মান ব্রিগেড তেমন চমকপ্রদ কিছু করতে পারে কিনা।‌‌


আরো সংবাদ



premium cement
বড় চমক ছাড়াই প্রস্তুত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল দোয়ারাবাজারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, আটক ১ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের দাবি সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির ২ প্রার্থী নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৮৫ দিন : শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম, কার্যকর বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী ‘ইসলামী সমাজ বিপ্লব ছাড়া মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়’ ইসরাইলে জার্মানির অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আইসিজের অস্বীকৃতি

সকল