১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


বিভিন্ন রাজ্যে সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভ

৭ মুসলিম দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করবেন বাইডেন ; শেষ কর্মদিবসে শতাধিক অপরাধীকে ক্ষমা ট্রাম্পের
-

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্য পরিষদের আশপাশে বিক্ষোভ করেছে সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকরা। ছোট ছোট দলে জড়ো হয়ে প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হওয়ার পর স্থানীয় সময় রোববার রাজ্যপরিষদগুলো ঘিরে সশস্ত্র প্রতিবাদের ডাক দেয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ দিন টেক্সাস, ওরেগন, মিশিগান, ওহাইও ও অন্যান্য স্থানে রাজ্য ক্যাপিটল ভবন বা আইন পরিষদগুলোর সামনে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আইন পরিষদগুলো ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করায় অন্য অনেক রাজ্যের পরিস্থিতি শান্ত ছিল। বুধবার বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের আগে রোববার দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিবাদের ব্যাপারে এর আগে এফবিআই সতর্ক করেছিল। সহিংসতার আশঙ্কায় বহু নগর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছিল, সড়কগুলোতে অবরোধ বসিয়ে হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও সিএনএনের।
এর আগে অনলাইনে ট্রাম্পপন্থী ও কট্টর ডানপন্থী নেটওয়ার্কগুলোর দেয়া পোস্টে ১৭ জানুয়ারি সশস্ত্র বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু এসব কর্মসূচির ডাক পুলিশের ফাঁদ হতে পারে এবং কঠোর নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী অনুসারীদের এতে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলে। শেষ পর্যন্ত অল্পসংখ্যক প্রতিবাদকারী যাদের সংখ্যা কয়েক ডজন হবে কয়েকটি শহরে জড়ো হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওহাইওর কলম্বাস শহরে রাজ্যপরিষদের সামনে অস্ত্র সজ্জিত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বুগালু বোয়িস মুভমেন্টের প্রায় ২৫ জন সদস্য ছিলেন। মার্কিন সরকারকে উৎখাত করতে চাওয়া শিথিলভাবে সংগঠিত এই গোষ্ঠীটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করা ‘বন্দুক রাখার অধিকার’ বিষয়ক সমাবেশে যোগ দিতে এখানে এসেছেন। এ দিকে মিশিগানে প্রায় দুই ডজন লোক, যাদের কয়েকজন রাইফেল বহন করছিলেন, লান্সিংয়ে রাজ্যপরিষদের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে; এ সময় পুলিশ তাদের ওপর সতর্ক নজর রাখে। অস্টিনে টেক্সাসের ক্যাপিটল ভবনের সামনেও প্রায় এক ডজনের মতো প্রতিবাদকারী দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের কয়েকজনের কাছে রাইফেল ছিল। তবে হারিসবার্গে পেনসিলভেনিয়ার ক্যাপিটলের সামনে ট্রাম্পের একজন সমর্থক স্বল্প উপস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে কিছুই হচ্ছে না।’ অবশ্য কাউ বয়েজ ফর ট্রাম্প নামে একটি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা কুই গ্রিফিন প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি অভিষেকের দিন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফিরে আসবেন।
বাইডেনের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের দিনটিতে আরো প্রতিবাদ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দিন ট্রাম্পের স্থলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বাইডেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক সামনে রেখে ওয়াশিংটন ডিসির অধিকাংশ এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রচুর ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিক্রেট সার্ভিসের অনুরোধে ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বাইডেনের টিম দেশবাসীকে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে রাজধানীতে না আসার আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়রসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা জনগণকে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান দূর থেকে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা রায়ান ম্যাককার্থি সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কায় প্রত্যেক ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের অতীত পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এর আগে ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনের দাঙ্গার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে নিউ মেক্সিকোর এক কাউন্টি কর্মকর্তাকে ওয়াশিংটনে গ্রেফতার করা হয়।এ দিকে জানা গেছে, দায়িত্বের প্রথম দিনে বাইডেন যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন, তার একটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেয়ার ঘোষণা থাকবে। আরেকটিতে সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নতুন নির্বাহী আদেশ দেবেন তিনি। বাইডেনের মনোনীত হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইনের এক নথি থেকে জানা গেছে, প্রথম দিনই বাইডেন বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন। এর মধ্যে মুসলিম দেশগুলোর ওপর আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংশ্লিষ্ট আদেশ থাকতে পারে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ২০১৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। দেশগুলো হলোÑ ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান, ইয়েমেন ও সোমালিয়া। এর পাশাপাশি এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণ এবং ফেডারেল সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক বাধ্যতামূলক করবেন বাইডেন। এসব নির্বাহী আদেশ দিতে অভিষেকের দিনই ব্যস্ত সময় কাটবে নতুন প্রেসিডেন্টের। এ ছাড়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরা, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন ও ঋণ স্থগিতসংক্রান্ত ট্রাম্পের আদেশ বাতিল, অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়গুলো থাকতে পারে। আরো জানা গেছে, মেক্সিকোর সাথে সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সন্তানদের সাথে বাবা-মার পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করতেও পদক্ষেপ নেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
শেষ কর্মদিবসে শতাধিক অপরাধীকে সাধারণ ক্ষমা ট্রাম্পের : বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার তার শেষ কর্মদিবসেও শতাধিক অপরাধীকে সাধারণ ক্ষমার আদেশে সই করতে যাচ্ছেন। রোববার হোয়াইট হাউজের বিশেষ এক সভায় প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার জন্য ওই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে দণ্ড মওকুফ, বিচার থেকে দায়মুক্তি এবং দণ্ড কমানোর আদেশ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পর্যন্ত ৯৪ জন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তি ও সাজা কমিয়ে দিয়েছেন।
১৯ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ পূর্ণ কর্মদিবস। পরদিন দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগপর্যন্ত তিনি সাধারণ ক্ষমাপত্রে সই করতে পারবেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রোববার দিনভর হোয়াইট হাউজে তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমন তার নিজস্ব লোকজনকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করবেন, কাউকে কাউকে অপরাধ থেকে আগাম মুক্তিও দেবেন। এ ক্ষেত্রে মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে অবারিত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, হাজার হাজার ডলারের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগ করেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাধারণ ক্ষমার তালিকায় নাম ঢোকানোর তদবির চলেছে শেষ মুহূর্তে। এ ছাড়া তার পরিবারের লোকজন, রাজনৈতিক সহযোগী, আইনজীবী রুডি জুলিয়ানিসহ অনেককেই আগাম সাধারণ ক্ষমা বা বিচারপ্রক্রিয়া থেকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশনায় তিনি সই করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি : ‘বিপজ্জনক অপরাধের’ অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিন এ মামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের উসকানি দেয়ার মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধ’ করেছেন। ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরই মামলার কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবে অংশগ্রহণকারীদের উসকানির দায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয় প্রতিনিধি পরিষদে। অভিশংসন প্রস্তাবটি এনেছিলেন কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিনই। অভিশংসন প্রস্তাব পাস করাতে পেরে রাসকিন এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করায় উদ্যোগী হয়েছেন। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাবটি হাউজের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি কখন সিনেটে পাঠাবেন তা জানাননি রাসকিন। শুধু বলেছেন, শিগগিরই এটি আসা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সংস্কৃতিতে আরো বেশি শ্রম-মেধা বিনিয়োগ করতে হবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত ২ বাংলাদেশীর লাশ হস্তান্তর কালীগঞ্জে আম পাড়তে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু ‘নুসুক’ কার্ডধারী ছাড়া অন্য কারো মাশায়েরে মুকাদ্দাসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ বোলারদের নৈপুণ্যে কষ্টার্জিত জয় বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছাতে হবে : মোবারক হোসাইন নাঙ্গলকোটে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকা তরুণীর অনশন, পলাতক প্রেমিক চার উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের বরিশাল অঞ্চল জামায়াতের উপজেলা আমির সম্মেলন অনুষ্ঠিত তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করেন : শাহজাহান খান অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক পহেলা বৈশাখ আমাদের মূল চালিকাশক্তি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল