২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী

সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী -


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌল ভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারের সরবরাহ বাড়িয়ে দেশের শেয়ারবাজারকে আরো জোরদার করতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চলতি বছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নবম সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থবিভাগ ও অর্থসচিবকে শেয়ারবাজারে এসওই এবং সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) আবদুস সালাম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো: শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসওইগুলোর নাম নির্দিষ্ট করেননি, তবে অর্থবিভাগ এবং অর্থসচিবকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করে এসওই এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্বাচন করতে বলেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এতে ওইসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়বে। কারণ তারা শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

পরিকল্পনা সচিব বলেন, একনেক বৈঠকে মোট পাঁচ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ‘মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে, বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে পাঁচ হাজার ২০৩ দশমিক ২১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা হিসাবে ৩৬০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা আসবে।’ অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে এখন ৮টি নতুন এবং দু’টি সংশোধিত প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া কিছু নির্দেশনা তুলে ধরে সত্যজিৎ বলেন, প্রয়োজনীয় তহবিলসহ প্রায় সব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পূর্ববর্তী নির্দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৩৩৯টি প্রকল্পের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৪টি প্রকল্প এই অর্থবছরের (অর্থবর্ষ ২৪) মধ্যে সম্পন্ন হবে। যৌক্তিক কারণে বাকি পাঁচটি প্রকল্প চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
খুলনার শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১,৮৭৪.৫৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে- প্রধানমন্ত্রী তার পর্যবেক্ষণে দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো- প্রথমে প্রকল্পের শিরোনাম থেকে তার নাম পরিবর্তন করা এবং একটি ম্যুরাল নির্মাণের খরচ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা।

এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্পে তার নাম যুক্ত হলে, তিনি তার অনুমোদন দেবেন না।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চায়না এইড প্রকল্পের জন্য ২৮৪.৭৬ কোটি টাকার অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের জন্য নতুন নাম নির্বাচন করতে উন্নয়ন সহযোগীর সাথে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য তার শর্তাবলি শিথিল করছে কিনা-জানতে চাইলে সত্যজিৎ বলেন, নির্বাহক সংস্থাগুলো থেকে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও, পরিকল্পনা কমিশন সময়সীমা বাড়ায়নি-যার ফলে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৪টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরেই শেষ হবে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন প্রকল্পগুলো বিলম্বিত হবে, তত বেশি সময় চলে যাবে। এ কারণেই আমরা প্রতিটি প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে দেখি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক সময় অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যায়।
ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণে প্রায়শই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়- উল্লেখ করে সালাম বলেন, সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো, ১৪৪.০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান পরিষেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি, ১,১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পিরোজপুর ও ঝালকাটি জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ১,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ৮১.৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ও লেদার সেক্টরে (স্টাইল) স্থায়িত্ব, দ্বিতীয় সংশোধিত ৫২৭.৭৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন পদ্ধতিকে ভেজা থেকে শুষ্ক প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা, নতুন অত্যাধুনিক নির্মাণে ৩৩৪.৪৬ কোটি ব্যয়ে বিদ্যমান ঢাকা জেলা সার্কিট হাউজ বিল্ডিংয়ের পরিবর্তে সার্কিট হাউজ বিল্ডিং, ২২৩.০২ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবগঠিত (৬৩ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (বিজিবি) ও ৬.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় সংশোধিত আরবান রেজিলিয়িন্স প্রজক্ট (ইউআরপি): ডিডিএম অংশ।

‘বিএফডিসি রেডি টু কুক ফিশ’ ও মিল্কিং মেশিন হস্তান্তর : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো: আব্দুর রহমান এমপির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘বিএফডিসি রেডি-টু-কুক ফিশ’ সামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছেন। একই সাথে গরুর দুধ আহরণের কাজে ব্যবহৃত একটি মিল্কিং মেশিনও হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম বিশেষত রেডি টু কুক ফিশ কার্যক্রমের ফলে কর্মজীবী মহিলারা অনেক উপকৃত হবেন। তিনি কর্মজীবী মহিলাদের রান্না সহজীকরণে রেডি-টু-কুক ফিশ প্রস্তুতকরণ, বাজারজাতকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মোট ৪০ প্রজাতির মাছ রেডি টু কুক হিসেবে স্থায়ীভাবে ঢাকার কাওরানবাজারে অবস্থিত বিএফডিসি ভবনের মৎস্য বিতান, যাত্রাবাড়ীর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর বিপণন করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা শহরের ১৬টি স্পটে ছয়টি ফ্রিজিং ভ্যানের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ভিত্তিতে বাজারজাত করা হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ স্পটগুলো হলো: ১) মিরপুর ডিওএইচএস, ২৭ নম্বর রোড, ২) বনানী, নেভী হেডকোয়ার্টার ও গুলশান (আজাদ মসজিদ সংলগ্ন), ৩) সচিবালয়ের দক্ষিণ গেট, ৪) মিরপুর ডিওএইচএস, মিরপুর, ৫) স্বপ্ন নগর আবাসিক এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট, ৬) মিরপুর অপরাজিতা ভবন, মিরপুর, ৭) ধানমন্ডি ৬ নম্বর, ৮) আজিমপুর কলোনি, আজিমপুর, ৯) লেডিস ক্লাব, ইস্কাটন, ১০) সচিব কোয়ার্টার, ইস্কাটন (বুধবার ও শনিবার), ১১) দুদক অফিস সংলগ্ন, সেগুনবাগিচা, ১২) এজিবি কলোনি, মতিঝিল, ১৩) শংকর, ধানমন্ডি, ১৪) সেচভবন, মানিক মিয়া এভিনিউ (শুক্রবার ও শনিবার), ১৫) ধানমন্ডি ২৮ এবং ১৬) মোহাম্মদপুর মা ও শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন, মোহাম্মদপুর।
এছাড়া অনলাইন, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও ‘বিএফডিসি রেডি টু কুক ফিশ’ বাজারজাত করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement