০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নেটফ্লিক্সে বাংলাদেশী পণ্য নিয়ে ‘আপত্তিকর’ সংলাপ, প্রতিবাদের ঝড়

-

সারা বিশ্বে ইন্টারনেটে সিনেমা দেখার জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সিনেমায় বাংলাদেশের রফতানি পণ্য নিয়ে ‘আপত্তিকর’ সংলাপ রাখায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সিনেমাটি দেখার পর অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের সুনাম নষ্ট করতে সুপরিকল্পিতভাবে এমনটা করা হয়েছে। শক্তভাবে এর প্রতিবাদ না করলে রফতানি পণ্য, বিশেষ করে পোশাকখাতে এর বড় রকমের প্রভাব পড়বে।
বিষয়টি প্রথমে নজরে আনেন কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক মুহম্মদ খান। নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখতে গিয়ে বিষয়টি তার নজড়ে পড়ে। এ নিয়ে ফেসবুকে তিনি একটি পোস্ট দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী মুহম্মদ খানের ফেসবুক ওয়ালে লিখে প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদ করেছেন দেশের অনেকে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরী পোশাক শিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানও উষ্মা প্রকাশ করেছেন ওই সংলাপে।
গত ৩০ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ভ্যান ড্যাম অভিনীত ছবি ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’। চলচ্চিত্রটি এখন এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার তালিকার সেরা দশে অবস্থান করছে। বহুল ভিউ হওয়া ছবিটিতে বাংলাদেশী পণ্যবিরোধী প্রচারণার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। চলচ্চিত্রটির একটি সংলাপে তার প্রমাণও মেলে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ডেভিড চ্যারন পরিচালিত ফ্রেঞ্চ ভাষার এ ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যকে নি¤œমানের বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। ছবিটির ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিটে শুরু হওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, একজন অভিনয়শিল্পী বলছেন, ‘হ্যাঁ, এটা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট’। প্রত্যুত্তরে আরেকজন বলেন, ‘এটা মেড ইন ফ্রান্স। তবে যদি এটি বাংলাদেশ থেকে আসে, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।’
সংলাপটি নিয়ে মুহম্মদ খান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেনÑ হোক প্রতিবাদ। ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’ এ বছরই মুক্তি পাওয়া নেটফ্লিক্স অরিজিনাল মুভি। জানি না বাংলাদেশে কতজন দেখছে, তবে কানাডায় আজকের ‘টপ টেন’ তালিকায় ৭-এ। মানে, লাখো কানাডিয়ান দেখছে মুভিটা। সারা বিশ্ব মিলে নিশ্চয়ই কোটি দর্শক! মুভিটার শেষভাগে এসে একটা ডায়লগ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। পরিচালক ডেভিড চ্যারন কিংবা দারুণ জনপ্রিয় অভিনেতা জ্যঁ-ক্লদ ভ্যান ড্যামের মুভিতে এমন ডায়লগ কোনোভাবেই আশা করিনি। ডায়লগটা এমনÑ ‘হ্যাঁ, এটা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট’। প্রত্যুত্তরে আরেকজন বলেন, ‘এটা মেড ইন ফ্রান্স। তবে যদি এটি বাংলাদেশ থেকে আসে, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।’
বাংলাদেশকে, আরো স্পষ্ট করে বললে ‘বাংলাদেশে তৈরি পণ্যকে খুব নি¤œমানের হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। (স্ক্রিনশট দেখলেই বুঝবেন। অথবা মুভিটার ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিটের পরপরই আছে ডায়লগটা)। বিষয়টিকে নেহায়েত সিনেমার একটা ডায়লগ মনে করলে আমার মনে হয় চরম বোকামি হবে। এটা খুব প্রচ্ছন্নভাবে করা হয়েছে বলেই ধরে নেয়া ভালো এবং বাংলাদেশের বা বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের নেগেটিভ ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য এসব মুভি যে মোক্ষম অস্ত্র, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না! একটা জুতসই প্রতিবাদ হওয়া দরকার না?’ সুজন হোসেন নামের একজন লেখেন, ‘আমরা বুলেটপ্রুফ কিছু তৈরি করি না। তার পরও এর সাথে বাংলাদেশের নাম জুড়ে নি¤œমানের প্রমাণ করাটা সত্যিকার অর্থে একটা গভীর চক্রান্ত। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক, চামড়া, ওষুধ এবং অন্যান্য রফতানিযোগ্য পণ্য ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে।’ সুমন কায়সার লিখেছেন, ‘এত দেশ থাকতে বাংলাদেশ! প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশ্যমূলক প্রচার হওয়া অসম্ভব না।’ শেখ শাফায়েত হোসেন লিখেছেন, ‘খান ভাই, এ রকম একটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও প্রতিবাদ হওয়া দরকার। একজন বিজনেস রিপোর্টার হিসেবে আমি তো ভাই কোনোভাবেই মেলাতে পারছি না। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশি তৈরী পোশাক। এসব পোশাকের মান এতই ভালো যে, এই লকডাউনের মধ্যেও কারখানা খুলে পোশাক বানিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। পোশাকের বাইরে অন্য যেসব পণ্য বিদেশে রফতানি হয়, এগুলোও দেশের মধ্যে থেকে বাছাই করা সেরা পণ্য। তাহলে কেন বিদেশী মুভিতে বাংলাদেশের পণ্য নি¤œমানের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বুঝলাম না।’ রাশেদুজ্জামান লিটু লেখেন, ‘অবশ্যই এর যথার্থ প্রতিবাদ হওয়া উচিত। এভাবে কূটকৌশল অবলম্বন করে বাংলাদেশী পণ্যের প্রতিযোগীর দালালি করে মুভির মতো একটা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অতিরিক্ত স্বার্থ হাসিলের যে অপপ্রয়াস পরিচালক ডেভিড চ্যারন করেছেন, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তার এই নেতিবাচক উক্তির ফলে আমাদের তৈরী পোশাকের বাজারে যে মর্যাদাহানি হয়েছে, তার বিপরীতে তাকে ক্ষতিপূরণসহ ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।’ আবদুল্লøাহ আল মামুন নামের একজন লিখেছেন, ‘উদ্বেগের কিছু নেই, নেতিবাচক প্রচারণা ও সমালোচনাও এক ধরনের ইতিবাচক ব্যান্ডিং’। জহির উদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, অবশ্যই। এখনই প্রতিবাদ করা উচিত। করতে হবে। এর দ্বারা আমাদের ছোট করা হয়েছে। অন্যান্য সেক্টরে এর প্রভাব পড়বে। স্ট্যানলি সিলং মারক নামে একজন লিখেছেন, বাংলাদেশী কাপড় নি¤œমানের হিসেবে দেখায়নি। বাংলাদেশ গ্রার্মেন্ট শিল্পের জন্য ভালোই পরিচিত, কিন্তু বাংলাদেশ বুলেটপ্রুফ কোনো কিছু বানায় না। জোকটা ছিল যে যদি বাংলাদেশের বানানো কোনো জ্যাকেট পরত তাহলে সেটা বুলেটপ্রুফ হতো না সে মারা যেত।
বিজিএমইএর সভাপতিরও উদ্বেগ : বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মুভিটি আমি দেখিনি। তবে যা শুনছিÑ সত্যিই যদি বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে এ ধরনের কোনো সংলাপ কোনো ছবিতে দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে প্রতিবাদ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় উন্নতমানের পোশাক রফতানি করি, সে কারণেই বিশ্বের বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো আমাদের পোশাক কেনে। কোনো চলচ্চিত্র বা মুভিতে বাংলাদেশকে নিয়ে বিতর্কিত কোনো সংলাপ মোটেই সমীচীন নয়।’
মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ (৩৮.৭৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশী মুদ্রা আয় করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তৈরী পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
নেটফ্লিক্স একটি মার্কিন বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট মাসে রিড হ্যাস্টিংস এবং মার্ক রেন্ডোল্ফ দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের স্কটস ভ্যালি শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত সংস্থান মিডিয়া দর্শন এবং প্রয়োজন মাফিক অনলাইন। নেটফ্লিক্স পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র এবং ছোট পর্দার ধারাবাহিক, চলচ্চিত্র পরিচালনায় সম্প্রসারিত হয়, এর সাথে ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইনে চলচ্চিত্রের বণ্টনও চালু করে। নেটফ্লিক্স ২০১৩ সালে কনটেন্ট (নাটক, চলচ্চিত্র, ভিডিও) প্রযোজনা শিল্পে প্রবেশ করে।


আরো সংবাদ



premium cement