২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভূগর্ভস্থ পানি ঝুঁকিতে ঢাকা মহানগরী

দুর্বল পানি ব্যবস্থাপনা দায়ী

-

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিঠা পানির নদীবেষ্টিত শহর ঢাকা। মিঠা পানির এই জলাধার ইতোমধ্যে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একই সাথে ব্যাপক হারে উত্তোলনে ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নেমে যাচ্ছে। দুর্বল পানি ব্যবস্থাপনাও এর জন্য দায়ী। শুধু তাই নয়, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি অস্বাস্থ্যকরও। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা ৮০ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর জীবাণু ই-কোলাই রয়েছে।
অপরিকল্পিত এবং নির্বিচারে উত্তোলনে রাজধানী ঢাকার পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে। অথচ কয়েক দশক আগে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন পাউবো এবং পানিবিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। ফলে বর্তমান এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে আমাদের। পরিণতিতে অদূরভবিষ্যতে ঢাকার পানি ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সাথে প্রাকৃতিক বিপর্যয়; বিশেষ করে ভূমিকম্পের শঙ্কা বাড়ছে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। একদিকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, অন্য দিকে ঢাকাকে ইট-পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে শুধু পানি সঙ্কট সমস্যা নয়, ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের আশঙ্কা, ঢাকার মাটির নিচে একটি বড় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। মাটির নিচে হচ্ছে বলে আমরা সেটা টের পাচ্ছি না। ঢাকার কেন্দ্রে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় একটি শূন্যস্থান চিহ্নিত করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। ভূতত্ত্বের ভাষায় বলা হয় ‘কম্পাউন্ড কোন অব ডিপ্রেশন’। এই ‘কম্পাউন্ড কোন অব ডিপ্রেশন’-এর বিস্তার ঢাকার কেন্দ্র থেকে আশপাশের প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নামতে থাকায় পানি সঙ্কট ও ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর জন্য পানির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা।
নগরবাসীর প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে প্রচুর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। দূষণ ও দখলে ঢাকার চারপাশের নদী ও নালা পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায়, নগরীর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার ঘরে ও শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা প্রায় ৭০ ভাগ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। শুধু ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে; কিন্তু এ পানির অন্তত ২৫ শতাংশ অপচয় হচ্ছে সরবরাহ প্রক্রিয়ার ত্রুটিতে।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে পাউবোর পরিসংখ্যানে। ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরে ৬ মিটার বা প্রায় ২০ ফুট মাটির নিচে পানি পাওয়া যেত। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৩ সালে এসে ৭৫ মিটারে নেমেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি নেমে যেতে পারে ১২০ মিটারে। কেননা, ওয়াসার প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে প্রতিদিন ৩৫ লাখ ঘনমিটার, ২০৩০ সালে প্রতিদিন ৪৩ লাখ ঘনমিটার এবং ২০৩৫ সালে প্রতিদিন ৫২ লাখ ঘনমিটার পানির চাহিদা থাকবে ঢাকায়।
ঢাকা নদীবেষ্টিত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ হলেও দূষণ, দখল, ভরাটে শহরের নদীগুলো আজ মৃতপ্রায় এবং অস্তিত্ব হুমকিতে। অন্য দিকে এই শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ নিম্নাঞ্চল ভরাট করা হয়েছে। এতেও এই নগরীর উপরিভাগের পানি দ্রুত কমে যাচ্ছে।
ভূবিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক রাখতে হবে। এ জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ওয়াসাকে নদীর পানি দূষণ রোধে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ন কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। পানির অপচয় রোধে পানি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফতুল্লা ৮৩০ গার্মেন্টেস শ্রমিক বিরুদ্ধে মামলা শ্রীনগরে ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ টানা চতুর্থবার কমলো স্বর্ণের দাম দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা : সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বগুড়ায় ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ৫ সোনারগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় নেপালের পানিবিদ্যুৎ কিনছে ভারত, বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটুকু? ‘নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বিএনপি থেকে চিরতরে বহিষ্কার’ ইউক্রেনের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের বগুড়ার শেরপুর প্রেসক্লাবের পুন: সভাপতি নিমাই-সম্পাদক মান্নান হিট স্ট্রোকে পাইকগাছার ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যু

সকল