২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কষ্টে সাধারণ মানুষ

কমানোর পদক্ষেপ নেই

-


দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এ অবস্থা চলছে সাত-আট মাস ধরে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার কারণে দেশের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ছাড়া বাদবাকি সব মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সরকারপ্রধান দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনগণের কষ্ট লাঘবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে মানুষ কষ্টে আছে। স্বীকার করে বসে থাকলে তো হবে না। নানা কৌশল দিয়ে এটি মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্যই হবে মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিতে কাজ করা।’ গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
বৈশ্বিক বাজারে কমলেও আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না কেন- একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বিদেশে কমলেও রাতারাতি দেশে প্রভাব পড়ে না। আমরা অনেক পণ্যের দাম দুই মাস আগে পেমেন্ট করেছি। সেগুলো এখনো হাতে পাইনি। এ ছাড়া ডলারের দাম এখনো কমেনি। ডলার দিয়ে আমাদের পণ্য আমদানি করতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘আশা করেছিলাম মূল্যস্ফীতি কমবে। কিন্তু কমেনি; বরং আরো বেড়েছে। এটি দুঃখজনক। মূল্যস্ফীতি কবে কমবে বলতে পারব না। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আমরা নানা কৌশল নিচ্ছি।’

নতুন প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটি সম্ভব নয় দাবি করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ৬ শতাংশে নামাতে পারব না, চেষ্টা করব। বাজার মসৃণ করব।’
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবতা হলো- বিগত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে গত মে মাসের মতো মূল্যস্ফীতির এত চাপে পড়েনি সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত সোমবার প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, গত মে মাসে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১৩৪ মাস বা ১১ বছর দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মানে হলো, ২০২২ সালের মে মাসে একজন মানুষ যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতেন, চলতি বছরের মে মাসে একই পণ্য কিনতে তার খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৯৪ পয়সা।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১২ সালের মার্চে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এর পর আর কখনো মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে যায়নি। ওই বছরের পরের মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে।
সম্প্রতি বেশ কিছু দিন ধরে দেশে তীব্র তাপদাহ চলছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কট। পাশাপাশি বাজারেও আগুন। এতে সীমিত আয়ের মানুষ তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ রকম এক অবস্থায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু ১ জুন ঘোষিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় উদ্যোগ দেখা যায়নি। অথচ মূল্যস্ফীতিকে বলা হয় এক ধরনের কর, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর আরোপ হয়। তবে চাপে পড়ে মূলত সীমিত আয়ের মানুষ। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং এটি স্পষ্ট, দ্রব্যমূল্যের কষাঘাত থেকে সহসাই মুক্তি পাবে না মানুষ।


আরো সংবাদ



premium cement