২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাবনায় আবাদি জমি অকৃষিতে ব্যবহার

হ্রাস পাচ্ছে চাষযোগ্য ভূমি

-

আমাদের দেশে যে জনসংখ্যা; সেই তুলনায় আবাদি জমি কম। যতটুকু কৃষিজমি এখনো রয়েছে, বাড়তি জনসংখ্যার চাপে ও শিল্প খাতে জমির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তার পরিমাণ দ্রুত কমছে। এটি উদ্বেগজনক। কারণ, দেশে প্রয়োজন অনুসারে খাদ্যশস্য উৎপাদন না হলে তা আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, করোনাকালে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ সীমিত হয়ে এলে মহামারীকালে অনেক দেশ প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করতে বাধার সম্মুখীন হয়। এ কারণে গত তিন বছর ধরে দেশে দেশে অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটাতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে অধিক মনোযোগী হয়েছে। লক্ষণীয়, আপৎকালে ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী কৃষিতে জোর দেয়া হচ্ছে; বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনে। তবে আমরা কৃষিতে জোর দেয়ার কথা বললেও বাস্তবে বাংলাদেশে কমছে আবাদি জমি। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন অমান্য করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হচ্ছে।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত পত্রিকার বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবনা জেলায় অকৃষি খাতে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমি। ওই জেলার বিভিন্ন জায়গায় জমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। আর রাতে আবাদযোগ্য জমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। কৃষিজমির বড় একটি অংশ চলে গেছে বাণিজ্যিক পুকুর খননে। অথচ জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা। এতে কমতে শুরু করেছে ফসল উৎপাদন। এ ছাড়া মাটিভর্তি ও খালি ট্রাক চলাচলে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে বাধাহীনভাবে চলছে এই কর্ম। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এতে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু এ আইন অমান্য করে পাবনার ৯ উপজেলায় অবাধে কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে স্কেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে। পরে ট্রাকে করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায়।
পাবনায় আবাদি জমিতে পুকুর খনন কী পরিমাণ বেড়েছে তা জানা যায় জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে জেলায় পুকুরের পরিমাণ ছিল সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর। এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছের খামার ছিল তিন হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে বাণিজ্যিক খামার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার হেক্টরে। এটিকে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সাফল্য হিসেবে দেখছে মৎস্য বিভাগ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, বাণিজ্যিক এসব পুকুর খনন করা হয়েছে আবাদি জমিতে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছর ফসলহানি হচ্ছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। পুকুর খননের কারণে আশপাশের জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তা ছাড়া মাটিবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় সড়কগুলোতে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, কোন এলাকায় কতগুলো পুকুর প্রয়োজন আছে এবং পরিবেশের ওপর এতে কী প্রভাব পড়তে পারে- সেসব বিবেচনায় না নিয়ে যথেচ্ছভাবে পুকুর খনন করা বিপজ্জনক।
মাছচাষ লাভজনক মনে হওয়ায় অনেকে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করছেন। এ ছাড়া ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তিন-চার ফসলি জমির মাটি কেটে বাণিজ্যিক পুকুরে রূপান্তর করছেন। অথচ ভূমি ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ভূমির ধরন রূপান্তর করা নিষিদ্ধ। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় পরিষ্কারভাবে কৃষিজমি রূপান্তরে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ আছে।
আপাতদৃষ্টিতে কৃষিজমিতে পুকুর খনন লাভজনক মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কি আদৌ লাভজনক? আর জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করে নগদ অর্থ জমির মালিককে কতটুকু লাভবান করবে। সঙ্গত কারণে আমরা মনে করি, পাবনায় যারা এ অপকর্মে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হোক।


আরো সংবাদ



premium cement