শিশুস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা নয়
- ২৮ মে ২০২৩, ০০:০৫
আমাদের দেশ নানা খাতে উন্নতি করছে। কিন্তু এখনো শিশুপুষ্টির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এ বিষয়ে যতটুকু অগ্রগতি হওয়ার কথা; কাক্সিক্ষত মাত্রায় তা হয়নি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিমত তা-ই। ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুষ্টি প্রতিটি শিশুর অধিকার। পুষ্টশিশু পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে ও উন্নতি করতে পারে। যারা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অধিকারী হয়, তারা শেখা ও চর্চার ক্ষেত্রে ভালো করে, তারা দারিদ্র্য থেকে দূরে থাকে। সহযোগী একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশে গত কয়েক দশকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক খাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে পুষ্টি পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্যে তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী খর্বকায় শিশু ছিল ৪১ শতাংশ, ২০১৪ সালে কমে হয় ৩৬ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৩১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালে ২৪ শতাংশ। আর বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, ২০১২ সালে ছিল ৩৯ শতাংশ বা ৬০ লাখ ৪৬ হাজার। বর্তমানে ২৬ শতাংশ বা ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার। একে ‘উচ্চ’ হার হিসেবে অভিহিত করেছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক।
শিশু অপুষ্টির আলোচনায় প্রথমে শিশুদের উচ্চতার প্রসঙ্গ চলে আসে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। খর্বকায় শিশুদের শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এ সমস্যা জীবনভর চলে। এর পরিণাম পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছায়। বাংলাদেশে কতজন শিশু অপুষ্টির শিকার, তার অনুমিত সংখ্যা ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে প্রকাশ করেছে।
২৩ মে প্রকাশিত ‘শিশু অপুষ্টির মাত্রা ও প্রবণতা’ শীর্ষক ওই বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৬ শতাংশ শিশু খর্বকায়। অপুষ্টির শিকার এসব শিশুর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার। এদের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। অপুষ্টির আরেকটি সূচক কৃশতা। কিছু শিশু উচ্চতার তুলনায় কৃশ বা হালকা-পাতলা হয়। কোনো কারণে যদি দ্রুত ওজন কমে যায় বা কোনো কারণে যদি ওজন না বাড়তে থাকে, তাহলে শিশু কৃশ হয়ে পড়ে। মাঝারি থেকে মারাত্মক কৃশকায় শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের শিশুর চিকিৎসা দরকার হয়। প্রতিবেদন বলছে, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু কৃষকায়। এদের মোট সংখ্যা ১৪ লাখ ৩৮ হাজার। অন্যদিকে শিশুদের অনেকের মধ্যে অত্যধিক ওজনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেসব শিশুর ওজন উচ্চতার তুলনায় বেশি, তারা অতি ওজনের শিশু। যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি শক্তি শিশুরা যদি খাদ্য ও পানীয় থেকে গ্রহণ করে, তাহলে সেসব শিশু অতি ওজনের হয়। দেশে বর্তমানে এ ধরনের শিশু আছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বা তিন লাখ ১২ হাজার। ১০ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৭১ হাজার। অর্থাৎ কম করে হলেও প্রতি বছর এ ধরনের শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এসব শিশুর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কোনো কোনো শিশু একসাথে দু’ধরনের অপুষ্টিতে ভোগে। অর্থাৎ শিশু একই সাথে খর্বকায় ও অতি ওজনের হতে পারে। আবার কোনো ক্ষেত্রে শিশু একই সাথে খর্বকায় ও কৃশকায় হতে পারে। তবে একই সাথে দু’ধরনের অপুষ্টির শিকার শিশুদের বৈশ্বিক বা দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান নেই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া অতি জরুরি। অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা নিরসনে বহু খাতভিত্তিক পুষ্টিব্যবস্থার সফল বাস্তবায়নের প্রয়োজন অপরিসীম। স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগগুলোর পুষ্টিসহায়ক কার্যক্রমগুলো জোরদার করতে হবে। তা না হলে দেশের বিপুলসংখ্যক শিশু অপুষ্টিগত এসব সমস্যা নিয়েই বেড়ে উঠবে। এতে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই শারীরিক নানা জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা