২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরপর নিখোঁজের ঘটনা

ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশ চাই

-

মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেবে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী। কারো জীবন-সম্পদ হুমকিতে পড়লে তারা আশ্রয়ের জন্য ছুটে যাবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। বাস্তবে নাগরিকদের বেশির ভাগ বিপদে পড়ে তাদের কাছে যেতে ভয় পান; এড়িয়ে চলেন। মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা অব্যাহতভাবে কমায় এমন হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মানুষের জান-মালের প্রতি হুমকি সৃষ্টিতে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনাস্থা বহুদিনের। এ অবিশ্বাস আস্থাহীনতা ক্রমে বেড়ে চললেও সরকার কোনোভাবে বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে এক সাংবাদিক, এক আইনজীবী ও একজন চাকরিজীবীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার।


সাতক্ষীরায় রঘুনাথ খাঁ নামের সাংবাদিককে গত ২৩ জানুয়ারি তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভি এবং বাংলা-৭১ পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাকে পরদিন বিকেলে শেষ বেলায় আদালতে তোলা হয়। একটি সরকারি জমির দখল নিয়ে প্রভাবশালী মহল ও স্থানীয় ভূমিহীনদের দ্বন্দ্ব চলছিল। বিরোধপূর্ণ এলাকা ঘুরে বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন তিনি। আটকের জায়গা জেলা সদর হলেও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় পাশের উপজেলা দেবহাটা থানায়। এ ব্যাপারে তার স্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানান, স্বামীর খোঁজ না পেয়ে তিনি প্রভাবশালী মহলে যোগাযোগ করেন। তার সূত্র ধরে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) মতো আন্তর্জাতিক সাংবাদিক স্বার্থ রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতিতে সিপিজে তাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও বিদ্যুতিক শক দেয়ার অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এমন অভিযোগ এর আগেই তার স্ত্রী তোলেন। সৌভাগ্য রঘুনাথ এখন বিচারিক পর্যায় রয়েছেন। তার অবস্থান জানা গেছে। স্বজনরা বিচার পাওয়ার আশা করছেন। রঘুনাথ আটক হওয়ার আগের দিন ঢাকা থেকে তুলে নেয়া হয় এক আইনজীবীকে। বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে মগবাজারে অবস্থিত আদ-দ্বীন হাসপাতালের সামনে থেকে নিখোঁজ হন ওই আইনজীবী। তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় স্বজনরা তালাশ করে হয়রান হন। সহযোগী দৈনিক মানবজমিন তার সাত দিন পরে এক প্রতিবেদনে আবুল হোসেন রাজন নামে ওই আইনজীবীর অবস্থান নির্ণায়ক একটি ছবি ছাপে। পত্রিকাটির মতে, ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে; রাজন রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে রয়েছেন। দৈনিকটির পক্ষ থেকে যখন থানায় যোগাযোগ করা হয়, তখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ নামের কোনো আইনজীবীকে গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরিবারের দেয়া তথ্যমতে ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টায় তাকে তুলে নেয়া হয়। তার মোবাইলের রিংটোন বাজে কিন্তু কেউ রেসপন্স করে না। স্বজনরা রমনা, পল্টন, মতিঝিলসহ আশপাশের বিভিন্ন থানায় খবরের জন্য গেলেও গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। একই দিন নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, রাজধানী বনানীর একটি অফিস থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আব্দুর রাফী নামে আরেকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর চার দিন ধরে নিখোঁজ তিনি। নিখোঁজ ও গুম প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিছু সময় এমন প্রবণতা খানিকটা কমে। আবার দেখা যায় এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- এসব ঘটনার তদন্ত করতে সরকার অজানা কারণে আগ্রহী নয়। যেখানে অভিযোগগুলো খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়া যায়। যেমন রঘুনাথের বেলায়। তাকে গোপনে তুলে নেয়া হলেও এক দিনের ব্যবধানে আদালতে হাজির করা হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া মানুষের নিশ্চিত খবর পরিবারগুলো জানতে পারছে না।

মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে গুম বা নিখোঁজের একটি ঘটনাও গ্রহণযোগ্য নয়। এমন গুরুতর ঘটনা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার এগুলো অপকর্মের এমন এক দুয়ার খুলে দেয়; যাতে সমাজের প্রতিটি মানুষের জীবন অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এতে যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে এই নির্মমতার শিকার হতে পারেন। সরকারের উচিত এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া।


আরো সংবাদ



premium cement