২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জনশুমারির ফলাফলে তথ্যবিভ্রাট

অধিকতর যাচাই-বাছাই করুন

-

দেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জনশুমারি তথ্য-উপাত্তে নানা অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম ও জনপরিসরে চলছে তর্ক-বিতর্ক। আমাদের জনমিতির যে প্রবণতা, এর সাথে প্রাপ্ত তথ্যের মিল খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। শুমারি থেকে প্রাপ্ত মোটাদাগের ফল নিয়ে সঙ্গত কারণে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুমারিটি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। প্রতিষ্ঠানটির কাজ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে দেশব্যাপী এমন জরিপ চালানো। এ জন্য এটিকে রাষ্ট্রীয় অর্থে পোষা হয়। তারা যদি নিজেদের কাজ সঠিকভাবে করতে না পারে বা মূল কাজে গাফিলতি হয় তাহলে এটি পুষে লাভ কী? প্রতিষ্ঠানটির অদক্ষতার পাশাপাশি অবহেলার খবরও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জনশুমারির প্রধান প্রতিপাদ্য ছিল দেশের জনসংখ্যা কত? নিশ্চিত পরিসংখ্যানটি জানা। এখানেই এবার সবচেয়ে বেশি সংশয় দেখা দিয়েছে। উত্থাপিত প্রশ্নের বিপরীতে বিবিএস জোরালো কোনো জবাব দিতে পারছে না। বরং খবরে প্রকাশ, বহু মানুষ দাবি করছেন- গণনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ শুমারির হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। বিবিএস দুই বছর আগে প্রাক্কলিত প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তখন দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ এক হাজার। আগের অর্থাৎ চতুর্থ শুমারি অনুযায়ী দেশে ১.৪৬ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছিল। যদি ধরে নিই বিবিএসের আগের প্রতিবেদনটি সঠিক; তাহলে এবারের শুমারিতে জনসংখ্যা অন্তত আরো প্রায় ৪৭ লাখ বৃদ্ধির কথা। তা না হয়ে বরং ৪০ লাখ কমেছে। আমরা যদি বিবিএসের দুই বছর আগের প্রাক্কলিত হিসাব বাতিলও করে দিই, তার পরও এবারের ফল নিয়ে সন্দেহ অপনোদন হয় না।
রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রাট। জনশুমারির হিসাব- দুই সিটি করপোরেশন মিলে এক কোটি দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮৮২ জন মানুষ বাস করেন ঢাকায়। অথচ প্রায় ছয় বছর আগের জাতিসঙ্ঘ জনসংখ্যা তহবিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ঢাকার জনসংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা চালায় এমন প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের ধারণায়- ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। এদিকে এবার সিলেট বিভাগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নেমে শূন্য দশমিক ৯৬ হয়েছে। আগের শুমারিতে এ হার ছিল দ্বিগুণের বেশি- ২ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ এবার সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। শুমারির দল এখানে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি তা স্পষ্ট। শুমারির তথ্য নিয়ে যে বড় অসঙ্গতি লক্ষ করা যাচ্ছে তার মূল কারণ এটি হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।
তথ্য-উপাত্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা থাকে সরকারের। ইতিবাচক কাজের ক্ষেত্রে এটি নিন্দনীয় নয়। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সূচকগুলো কয়েক বছর ধরে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে সরকার। বাস্তবে মানুষের যাপিত জীবনের সাথে আমাদের মাথাপিছু আয়-ব্যয় ও উৎপাদনের বাস্তব সম্পর্কের মিল পাওয়া যায় না। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে দেখাতে সরকার জনসংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে।
জনশুমারির তথ্য-উপাত্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কিছু ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর। সরকারকে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। এবার এর সাথে যোগ হয়েছে শুমারি পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের গাফিলতি। এ জন্য বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করা হলেও দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজটি আন্তরিকতার সাথে করা হয়নি। শঙ্কার দিকটি হলো- প্রকৃত পরিসংখ্যানে বড় ধরনের গরমিল থাকলে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে সরকারের জন্য। সে কারণে এবারের জনশুমারি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া জরুরি। বড় ধরনের ঘাপলা থাকলে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

 


আরো সংবাদ



premium cement