২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফের বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

দেখার যেন কেউ নেই

-

রমজানের শুরুতেই বাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম এক দফা বেড়েছিল। রমজান মাসজুড়েই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত ছিল। সেই ধারা ফের লক্ষ করা যাচ্ছে। ঈদের দুই দিন পর ৫ মে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে এক লাফে ৩৮-৪৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ ধাক্কা সামলানোর আগেই এখন নতুন করে বাজারে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়তে শুরু করেছে। যদিও বলা হচ্ছে- ডলারের দাম বেড় যাওয়ায় আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু আগের আমদানি করা বহু পণ্য বাজারে সরবরাহ করা হলেও বেশি দামেই তা বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, গরুর গোশত, মুরগি ও ডিম, এই ১৫টি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগের বাজারমূল্য অনুযায়ী ৯৩০ টাকার পণ্য এখন কিনতে হচ্ছে আরো ১৩৯ টাকা বেশি দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে মাসের সংসার খরচের হিসাব মেলানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন হলো- কিছু দিন পরপরই সব জিনিসের দাম বাড়ে, সরকারের কি কিছু করার নেই?
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। সপ্তাহের শুরুতেও ছিল ৩০-৩৫ টাকা। মোটা দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। আর সরু দানা মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা। ঈদের আগে ছিল ১২০ টাকা। ঈদের পরও ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া খোলা চিনি দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে খোলা আটার দাম মানভেদে ৪০-৪২ টাকা। খোলা ময়দার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দামও বেড়েছে। এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এক ডজন কিনলে রাখা হচ্ছে ১১৫ টাকা। অথচ গত সপ্তাহেও প্রতি হালি ৩৬ টাকা ও প্রতি ডজন ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে মোড়কজাত গুঁড়া দুধের।
জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমদানিকারকদের বক্তব্য- টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আগের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। কিন্তু দেশী পণ্যের দাম বাড়ছে কেন, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মিলছে না। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরাদের দাবি, দেশী অনেক পণ্যের ঘাটতি নেই। তবু দাম বাড়ছে। যেহেতু আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে, সুযোগ বুঝে পাইকাররা ইচ্ছে করেই দেশীয় পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশে বাজার নজরদারিতে যে চর্চা আছে তা হলো- কখনো কখনো সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো, জরিমানা করা। তা-ও নিয়মিতভাবে করা হয় না। ফলে ব্যবসায়ীরা জনগণের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
করোনাকালে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এর সাথে আগের দরিদ্ররা তো রয়েছেই। সবার জানা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা রয়েছে বলে মনে হয় না। থাকলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজারের ওপর কঠোর নজরদারি করত। এ ছাড়া বাজারে বিদ্যমান সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করতে উদ্যোগী হতো সরকার। এসব কাজ করতে গরজ না থাকার কারণ সরকারের জবাবদিহিতার মানসিকতা নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতায় দেশে এভাবে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement