২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফসলি জমির মাটি কেটে ফেলা

জমির মালিকদের বাঁচাতে হবে

-

নয়া দিগন্তে রাজধানীর নিকটস্থ সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধির প্রেরিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিঙ্গাইরে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৬০টি ইটভাটার মালিকরা প্রকাশ্যেই কাটছেন আবাদি জমির মাটি। ২১৭ বর্গকিলোমিটারের উপজেলাটির ১১টির মধ্যে সাতটি ইউনিয়নেই ৬০টি ভাটা চালু আছে। ইটভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনপূর্বক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অন্যায়ভাবে আবাসিক জনপদে এবং তিন ফসলের ক্ষেতে এ ভাটাগুলো গড়েছেন। এসব ইটভাটায় প্রতিদিন ৪০০ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হয়। এর বৈরী প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি, জনসস্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ প্রভৃতি।
কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানিয়েছে, মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় বলধারা ইউনিয়নে ২৯টি, চান্দহর ইউনিয়নে ১০টি, বায়রা ইউপিতে সাতটি, জামিরতায় ছয়টি, চারিগ্রাম ও সদর ইউনিয়নে তিনটি করে ছয়টি এবং বল্লায় দু’টি ইটভাটা রয়েছে। ফলে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ ঘটছে এখানে। আবাদি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় শস্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। তা ছাড়া ফসলসহ ফলদ ও বনজ বৃক্ষ বিনষ্ট হচ্ছে। ইট বানানোর মূল উপাদান মাটির জোগান দিতে প্রতি বছরেই এখানে বেশ কয়েক শ’ বিঘা তিন ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। তাই জমিগুলো নিছক জলাশয়ে পর্যবসিত হচ্ছে। উত্তর পারিলের জনৈক বাসিন্দার বক্তব্য, “উচ্চাদালতে আমার মামলার প্রেক্ষাপটেই বলধারার একটি ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার জন্য আদেশ প্রদান করা হয়েছে। তবে ভাটার মালিক প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা চালু রেখেছেন। একজন প্রভাবসম্পন্ন জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সেটি দিয়েই ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।” এ দিকে উপজেলার কোনো কোনো চক ‘ইটভাটার নগরে’ পরিণত হয়েছে। ইউপির ট্রেড লাইসেন্স এবং পরিবেশবিষয়ক অধিদফতরের ছাড়পত্র জোগাড় করা হলেই পরিবেশ বিনাশী ইট পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। এ সর্বনাশা কার্যক্রম বন্ধ করতে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার মেমোরেন্ডাম দিয়েও সফল হয়নি। এ দিকে সম্প্রতি বলধারা ইউনিয়নের একটি চকে দেখা যায়, দিনের বেলাতেই ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এ মাটি সাত-আটটি ট্রলিতে করে পাশের ইটের ভাটায় নেয়া হয়। দিনরাত এ তাণ্ডব চলছে। ফসলের জমি বাঁচাতে ২০১৩ সালের পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে পদক্ষেপ চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভূমিমালিকসহ সিঙ্গাইরের সচেতন লোকজন। প্রসঙ্গক্রমে, উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি ফোনে কিছু বলতে চাননি। অপর দিকে সিঙ্গাইর উপজেলা কৃষি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইটভাটাসহ নানা কারণে বছরে দশমিক ৭ শতাংশ হারে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। এলাকায় অনেক ইটভাটার কারণে এবং জমির মাটি কাটায় ফসল হ্রাস পাচ্ছে এবং ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। স্থানীয় পুলিশের ওসি বলেন, ‘এসপির নির্দেশ : কোনো ফসলি জমির মাটিই কাটতে দেয়া হবে না। এ নির্দেশ না মানলে আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।’ মানিকগঞ্জের এডিসি (রাজস্ব) বলেছেন, ‘সহকারী কমিশনার ভূমি এবং ইউএনওকে বলব এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে।’
আমাদের স্পষ্ট দাবি, জমির উপরের মাটি বা ‘টপ সয়েল’ কেটে নিলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাবে। তাই এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে বাঁচাতে সরকারকে অবিলম্বে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে সরকারের একটা বড় দায়িত্ব প্রতিপালিত হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement