২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরিবহন ধর্মঘটের ভোগান্তি

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বলি মানুষ

-

অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের ফলে রাস্তায় বেরিয়ে মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। যাত্রী যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সারা দেশে হঠাৎ করে মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকায় কর্মস্থলগামী মানুষ পরিবহনের অভাবে দুঃসহ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। ঘোষিত ধর্মঘট হলে সেই ক্ষেত্রে গন্তব্য পৌঁছানোর জন্য মানুষের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। বলা নেই, কওয়া নেইÑ এভাবে সব যানবাহন প্রত্যাহার করায় রাস্তায় নেমে মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়ে গেলেন। নাগরিকদের অধিকার সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হঠাৎ করে রাস্তা থেকে গণপরিবহন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘটনা সত্যিই নজিরবিহীন। এমন বিচিত্র এক অবস্থা সম্ভবত কেবল বাংলাদেশে সম্ভব। এ দেশে অনেকে আইন নিয়ম বিধি ভাঙলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না কিংবা নেয়া হয় না।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘট শুরু করা হয়। এবার সরকার ও পরিবহন সংগঠনগুলোর মধ্যে যে রহস্যময় আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটা জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীর পক্ষ থেকে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়ার পরও মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো একচেটিয়া ধর্মঘট চালিয়ে যায়। উভয়ের মধ্যে এমন আচরণ আগে কখনো লক্ষ করা যায়নি। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করে কী বোঝাতে চান? তাদের পক্ষ থেকে ভাড়া অনেক বেশি বাড়ানোর দাবির কথা উঠেছে। এর মাধ্যমে তারা কি অন্যায্য ভাড়া বাড়াতে চান? এমন হলে তা সরকার ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের একটা অসাধু আঁতাতই বলতে হবে। পরে এসে লঞ্চ ও নৌপরিবহন মালিকরাও এ ধর্মঘটে যুক্ত হয়েছেন।
গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর একটা নিয়ম রয়েছে। বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া বাড়ানো হয়। এবার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ ৬৫ টাকা লিটার এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হবে। সেই অনুপাতে ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। তবে তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে তেলের দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলবে। খেয়াল রাখতে হবে এ সুযোগে যদি পরিবহন মালিকরা বেশি ভাড়া বাড়িয়ে নেন সেটা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। তেলের দাম বাড়ার একটি সাধারণ অভিঘাত পণ্যমূল্যের ওপর পড়বে। সাধারণ মানুষের সেটা সামাল দেয়া কঠিন হবে। পরিবহন ব্যয় যদি সে তুলনায় বেশি বাড়ানো হয়; তা পণ্যমূল্যের ওপর বেশি মাত্রায় পড়বে। অঘোষিত ধর্মঘটের মাধ্যমে পরিবহন মালিকরা সে ধরনের কোনো ফন্দি আঁটলে সরকারের উচিত সেটা মেনে না নেয়া।
এটা এখন নিশ্চিত যে পরিবহন ভাড়া বাড়বে। এটাও নিশ্চিত যে এর ফলে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ সরকারের সিদ্ধান্তের খুব একটা প্রতিবাদ করে না। মুখ বুজে সহ্য করার নীতি গ্রহণ করেছে। এবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে হঠাৎ করে সারা দেশে গণপরিবহন নৈরাজ্য। আসন্ন দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত হওয়ার শঙ্কার মধ্যে তারা গণপরিবহন ধর্মঘটে এবার চরম ভোগান্তির শিকার হলেন। রাজধানীতে বড় বড় কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষাসহ আরো বেশ কিছু কারণে মানুষকে ধর্মঘটের মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটেছে। সরাসরি প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজারে। বেশি দামে তরিতরকারি কিনতে হচ্ছে। পচে নষ্ট হয়েছে অনেক পণ্য। পরিবহন মালিকরা এসব ব্যাপারে ভাবতে নারাজ। অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে ক্ষতির দায় কে নেবেন? ভবিষ্যতে এ ধরনের নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের উচিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


আরো সংবাদ



premium cement