২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি

ক্রয়ক্ষমতা আরো হারাবে মানুষ

-

জনসাধারণের দুঃখ কষ্ট বোঝার অনুভূতি থাকতে হয়। একটি দেশের সরকার তখনই প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল হতে পারে যখন এ ক্ষমতা থাকে। জনসমর্থনে সরকার প্রতিষ্ঠার দর্শনটিও এখান থেকেই এসেছে। সরকার যখন জনগণের অভাব অনটন বুঝতে পারে তখন তারাও সরকারের প্রতি অনুগত থাকে। অন্য দিকে এ সংবেদনশীলতা না থাকলে জনগণ সেই সরকারকে পছন্দ করে না। আমাদের দেশের বর্তমান সরকারের বৈধতা সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। সরকার জনসাধারণের সমর্থনের বিষয়টি একেবারেই এড়িয়ে যাচ্ছে। যে কারণে এ দেশ থেকে ভোটের নিয়ম প্রায় উঠেই গেছে। এখন সরকার এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে; তাতে নাগরিকদের তোয়াক্কা করে না। করোনা মহামারীর প্রভাবে দেশে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথমত, জীবিকা উপার্জনের সুযোগ সীমিত হয়েছে, দ্বিতীয়ত, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থায় তাদের যখন প্রণোদনা দরকার তখন সরকার জ্বালানির দাম বাড়ালো।
বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে ৬৫ টাকার তেল ৮০ টাকায় বিক্রি হবে। ফার্নেস অয়েল ও রান্নার গ্যাসের দামও বেড়েছে। জ্বালানির দাম বাড়লে নিশ্চিতভাবে এর প্রভাব পড়ে বাজারের প্রত্যেকটি পণ্যের ওপর। এটি পণ্যের দামের চক্রবৃদ্ধির এক সূচনাবিন্দু। এর চাবিটা রয়েছে সরকারের হাতে। সরকার যখন এর মূল্য বৃদ্ধি করে তখন আপনা থেকে সবকিছুর দাম বাড়ে। এ ক্ষেত্রে একটি দায়িত্বশীল সরকার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সবসময় অত্যন্ত সতর্ক থাকে। দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে সরকার এ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে না। বরং এ দেশে সরকারকেই সুযোগসন্ধানী মনে হয়। বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম পড়ে গেল, তখন সরকার দেশে জ্বালানির উচ্চ দর কমায়নি। জানা যাচ্ছে, সরকার টানা সাত বছর বিশ্ববাজার থেকে অনেক বেশি দরে তেল বিক্রি করে এই বাবদ জনগণের কাছ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
তেলের দাম বাড়ানোর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পরিবহন খাতে। এ জন্য পরিবহন মালিকদের ক্ষতি গুনতে হবে। ইতোমধ্যে পরিবহন সেক্টরে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। মালিকরা ঠিকই সরকারের সাথে আঁতাত করে ভাড়া বাড়িয়ে নেবেন। আর দায়ভার বইতে হবে সাধারণ মানুষকে। বাড়তি হিসেবে প্রথম ক’দিন সারা দেশের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে মানুষ বিপুল ভোগান্তির শিকার হবেন। পণ্যের দামের ওপর এর যে প্রভাব পড়বে তা দীর্ঘমেয়াদে ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাওয়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় আঘাত হানবে উপর্যুপরি। এ নিয়ে সবাই শঙ্কিত। বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসি ও বিআইজিডি এক নতুন জরিপে জানাচ্ছে, করোনাকালে দেশে নতুন দরিদ্র হয়েছে তিন কোটি ২৪ লাখ লোক। এ অবস্থায় জ্বালানির দাম বৃদ্ধি জনগণের জন্য উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত আগুনে পড়ার মতোই হবে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে একটি নৈতিক অবস্থা জড়িত রয়েছে। আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরদিনই প্রতিবেশী দেশ ভারতে পেট্রলের দাম পাঁচ রুপি ও ডিজেলের দাম ১০ রুপি কমিয়েছে। কৃষকদের মৌসুমি উপকারের কথা ভেবে ভারত সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতে ক্ষমতায় থাকতে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিতে হয়। তাই তারা জনগণের দুঃখ কষ্টের প্রতি সঙ্গত কারণে যতœশীল। তেলের দাম বাড়ানোর পর আমাদের দেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তাদের মতে, জ্বালানি তেলের দাম প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করতে এটি করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর আগে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে পানির দরে তেল বিক্রি হয়েছে, তখন কেন সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে স্থানীয় বাজারের দাম সমন্বয় করেনি। আমরা মনে করি, জনসাধারণের প্রতি সরকারের একটি ন্যূনতম প্রতিশ্রুতি থাকা উচিত। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর থাকার দায় রয়েছে সরকারের।


আরো সংবাদ



premium cement
কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২

সকল