২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অসময়ে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চলে বন্যা

গজলডোবার গেট খুলে দেয়াই কারণ

-

সাধারণত অক্টোবর মাসে তিস্তায় পানি বাড়ে না। কিন্তু ভারতীয় অংশের গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ায় গত বুধবার আকস্মিকভাবে তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক উপরে উঠে যায়। তবে আশার কথাÑ গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে কয়েকটি এলাকার পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে। পাউবো সূত্রে জানা যায়, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তায় পানি বেড়ে যায়। ফলে এই নদীর বাংলাদেশ অংশে বন্যা দেখা দিয়েছে।
দেশের পানিবিজ্ঞানীরা মনে করেন, তিস্তাপারে বন্যার জন্য পাউবোর বর্ণিত কারণই একমাত্র কারণ নয়। এর অন্যতম কারণ হলোÑ প্রতিবেশী দেশ ভারত শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি আটকে রাখায় আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা দেয় পানির তীব্র সঙ্কট। একই সাথে বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় অংশের তিস্তার ওপর নির্মিত গজলডোবা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেয়ায় দেশের তিস্তা অববাহিকায় দেখা দেয় বন্যা। এ জন্য এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, গত বুধবারের আকস্মিক বন্যা হওয়ার জন্য গজলডোবার সব জলকপাট খুলে দেয়ার ভূমিকা রয়েছে।
পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তাপারের চাষিরা আগাম আলু রোপণ ও অন্য ফসল চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে তাদের। একই সাথে চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। এ ছাড়া পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী জনপদের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ, পানির তীব্র স্রোতে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দিনের বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসময়ের বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিস্তাঘেরা উত্তরাঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বিভিন্ন উপজেলার তিস্তাপারের বাসিন্দারা। বানের পানিতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রামে পানিবন্দী রয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তাপারের ১৪ ইউনিয়নের সাড়ে ১৭ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়ন এবং জলঢাকার ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী, কৈমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে আট সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় আট হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকার অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। শিশু, বৃদ্ধ এবং গবাদিপশু নিয়ে পানিবন্দী পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছেন। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার ও খাবার পানির সঙ্কট। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ। তিস্তাপারের বিস্তীর্ণ এলাকায় এক দিনের বন্যায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, আবাদি জমিসহ ফসলের ক্ষেত। এই বন্যায় নদী রক্ষার বাইপাস সড়ক, ৯টি স্পার্ক, ক্রস ও গ্রোয়েন বাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিপাতে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বহু কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে আমন ধানের ক্ষতি হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এই এলাকার কৃষকরা।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুধবার দুপুরে তিস্তার তীব্র স্রোতে এক কৃষক নিখোঁজ হয়েছেন। লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাডবাইপাস ভেঙে নীলফামারীর সাথে এবং অপর একটি সড়ক ধসে যাওয়ায় রংপুরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। লালমনিরহাটে বানের পানি ঢুকে ৪৬টি প্রাথমিক স্কুল এবং ১৯টি মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদরাসার পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় ৩৩৮০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের খামার। চরের আগাম আলু, মরিচ ও ধানক্ষেত ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিস্তাপারে আকস্মিক বন্যায় ওই জনপদের বাসিন্দাদের যে ক্ষতি হয়েছে; তা অপূরণীয়। তাদের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। এটি বিবেচনায় নিয়ে শুধু আশ্বাস নয়, অতি দ্রুত সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement