২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেপরোয়া হরিণ শিকার অব্যাহত

বন্যপ্রাণী রক্ষা করুন

-

বাংলাদেশে বনের পরিমাণ থাকা উচিত ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ। আছে মাত্র ৫ শতাংশেরও কম ভূমিতে। তেমনি হরিণসহ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীও দিন দিন কমছে। অনেক ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণীর মতো মূল্যবান সম্পদ নির্বিচারে ও বেপরোয়াভাবে নিঃশেষ করা হচ্ছে। শুধু সুন্দরবন নয়, দেশের যেখানেই বনাঞ্চল ও বন্য প্রাণিসম্পদ রয়েছে, সেখানেই এই অশুভ প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে একশ্রেণীর লোভী মানুষের মধ্যে। এর নমুনাস্বরূপ নয়া দিগন্তে এবার একটি খবর ছাপা হয়েছে যার শিরোনাম ‘সীতাকুণ্ডে বেপরোয়া হরিণ শিকার’। আসলে দু-এক স্থানে নয়, দেশজুড়েই অসৎ ও অপরিণামদর্শী মানুষের এহেন তাণ্ডব চলছে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধির পাঠানো সচিত্র প্রতিবেদনে জানা যায়, পেশাদার শিকারিদের অনেকে এখন বিষের সাহায্যে হরিণের অকাল মৃত্যু ঘটাচ্ছে। ওরা এই অপরাধ ঘটাতে বর্তমানে বেপরোয়া। সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে এবং উপকূলীয় অরণ্যে বিষ মিশিয়েও হরিণ হত্যা করা হচ্ছে। এতে প্রকৃতির প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। বিশেষত সাম্প্রতিককালে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাই তারা বন ও বাগান নির্বিশেষে হরিণ রক্ষার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, সাগর তীরবর্তী ও পাহাড়শোভিত সীতাকুণ্ড উপজেলায় আজো হরিণ আছে বহু। পাহাড় বা উপকূলীয় অরণ্য থেকে হরিণ সবজিক্ষেতে অথবা পানি পানের জন্য রাতে লোকালয়ে আসতে বাধ্য হয়। তখন অসৎ ও ধূর্ত শিকারিরা এ সুযোগের অসদ্ব্যবহার করে হরিণ নিধনে মেতে ওঠে। তারা হরিণের গোশতলোভীদের রসনাতৃপ্ত করতে নানা প্রকার ফাঁদ পেতে হরিণ ধরে থাকে। অনেকের কাছেই হরিণের গোশত খুব প্রিয় এবং তারা বেশি দামে হলেও তা কেনে। ফাঁদ ছাড়াও বিষাক্ত কীটনাশক মিশ্রিত সবজি খেয়ে মারা পড়ছে সুদর্শন অবোধ প্রাণীটি। আলোচ্য খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, সৈয়দপুর প্রভৃতি উপকূলীয় এলাকায় হরিণ ধরা ও মারার ঘটনা বারবার ঘটছে। কখনোবা বিষক্রিয়ায় মৃত হরিণের দেহ উদ্ধার করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। তবে ময়নাতদন্তের পর এটা পুঁতে ফেলা ছাড়া সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে তেমন দেখা যায় না। এ দিকে বনে মৃত হরিণের বহু দেহাবশেষ পড়ে আছে। স্থানীয় একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘উপকূলে হরিণ আছে অনেক। এরা প্রধানত শুষ্ক মৌসুমে মিঠা পানির জন্য এই এলাকায় আসে। তবে কখনো ফাঁদে ধরা পড়ছে; কখনো বা কীটনাশকের বিষে মারা পড়ছে। সুযোগসন্ধানী শিকারিদের ধরা সহজ না হলেও স্থানীয় কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বহু হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে।’ উপকূলীয় বন বিভাগ স্বীকার করেছে, পানি ও সবজি খেতে এসে হরিণ হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে। একজন বন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানালেন, ‘সম্প্রতি একটি বিরাট হরিণ বিষ মেশানো সবজি খেয়ে মারা গেলে তার পোস্টমর্টেম করা হয়। এতে বিষক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে।’
জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া কেবল আইন প্রয়োগে কিংবা প্রশাসনের কঠোরতায় প্রাণীসহ বনজসম্পদ রক্ষা করা যায় না। এ জন্য সবার সচেতনতা এবং যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে হরিণসহ বন্যপ্রাণী বাঁচাতে হবে। অন্যথায়, বিপন্ন প্রকৃতির প্রধান শিকার হবে মানুষই।


আরো সংবাদ



premium cement