২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নিখোঁজের পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে

হচ্ছে না কার্যকর তদন্ত

-

দেশে প্রায়ই নাগরিকদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটছে। পরে কারো কারো বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যাচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো নিখোঁজ ব্যক্তির উদ্ধারে প্রশাসনের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পান না এমন অভিযোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সাহায্য চেয়ে উল্টো নির্দয় আচরণের শিকার হন। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৫৭২ জন বাংলাদেশী নাগরিক দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক নিরুদ্দেশ হয়েছে বলে রিপোর্ট হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্য থেকে অনেকে নিখোঁজ হওয়ার পর এখন সাধারণ নাগরিকদের নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার দুর্বলতাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সন্তান হারিয়ে চরম হতাশাগ্রস্ত কোনো মা-বাবা যদি প্রশ্ন তোলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে না পারলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা কী, তাহলে তাদের কী জবাব দেবেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানরা?
এক মা তার সন্তানের খোঁজ পেতে রাজধানীর ভাটারা থানায় ধরনা দিচ্ছিলেন। থানা পুলিশ তার সন্তানের খবর দিতে পারেনি। ওই মা দমে যাননি। তিনি খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রেখেছিলেন। ছেলের মোবাইলে ফোন করেই যাচ্ছিলেন। ১৪ দিনের মাথায় তার ফোনে সাড়া পাওয়া যায়। এক মহিলা জানান, তিনি হাতিরঝিল থেকে সিমটি কুড়িয়ে পেয়েছেন। হাতিরঝিল থানায় গিয়ে মা জানতে পারেন তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন একটি লাশ তারা উদ্ধার করেছেন। সেটি বেশ কিছু দিন পর আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম দাফন করেছে। তাদের কাছে রক্ষিত কাপড়-জুতা ও লাশের ছবি দেখে তিনি তার ছেলেকে শনাক্ত করেন। কোথায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে সেটি তিনি বের করতে পারেননি। এ জন্য তার মাতম চলছে।
সাদমান সাকিব রাফি নামের ২৩ বছরের ওই যুবক মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতেন। করোনায় তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল সৌদি আরবে। প্রথমে ভাটারা থানার পুলিশ মায়ের কাছে তার লক্ষণ শুনে বলতে চেয়েছে ছেলে ‘জঙ্গি’ দলে গেছে। হাতিরঝিল পুলিশের পক্ষ থেকে সাদমানের ব্যক্তিগত জীবনের হতাশার কথার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তারা সন্দেহ করছেন, আত্মহত্যাও করে থাকতে পারে সাদমান। মায়ের দাবি হচ্ছে, ‘হত্যার’ ঘটনা নিয়ে কার্যকর তদন্ত হচ্ছে না। আমাদের দেশে ‘জঙ্গিবাদের’ যে আখ্যান রচিত হয়েছে সেটি পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে। ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ছাড়াই পুলিশ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। জঙ্গিবাদ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড জনসাধারণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এর ফলে অনেক নিরপরাধ মানুষ হত্যা-গুম-খুনের শিকার হয়ে যাচ্ছেন।
আরেকটি ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে কয়েকজন মিলে হত্যা করে এক ব্যক্তিকে। পরে উদ্ধার হওয়া একটি কঙ্কালের সাথে থাকা কাপড়চোপড় দেখে স্ত্রী ৫০ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম গাজীকে শনাক্ত করেন। ঘটনার তিন মাসের বেশি সময় পর নুরুলের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ক্লু পাওয়া গেল। এর মধ্যে অভিযুক্ত একজনকে আটক করেও ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ছেড়ে দেয়া ওই ব্যক্তি নুরুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া দলের সদস্য।
দেশে প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো পরিবারে শোকের মাতম ওঠে। তারা প্রিয় সন্তান, বাবা বা ভাই-বোনদের হারিয়ে কোনো প্রতিকার পায় না। উপরের দু’টি লাশ উদ্ধারের মতো ঘটনার মাধ্যমে কেউ কেউ তাদের পরিবারের প্রিয় সদস্যের শেষ পরিণতি জানতে পারেন। আবার অনেকে কিছুই জানতে পারেন না। আমাদের প্রশ্ন, সাধারণ নাগরিকদের জীবন কিভাবে এতটা বিপন্ন হয়ে উঠল। হত্যা, গুম কিভাবে একটি স্বাধীন দেশে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হলো। যারা এসব রোধ করবেন তারা এসবের দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু বিচারহীনতার এই অবস্থাও অনাদিকাল চলতে পারে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement