২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নির্বাচনের সেই পুরনো চিত্র

প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ দরকার

-

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর নানা অভিযোগের মধ্যে ৬০টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের পরিবেশ ও ফলাফলের চিত্র এখনো পুরনো ধারায়ই রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা একচেটিয়া প্রায় সব পৌরসভার মেয়র পদ জিতে নিয়েছে। কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জনসাধারণ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতমূলক আচরণের যেসব অভিযোগ ছিল সেগুলো কাটিয়ে ওঠার কোনো প্রচেষ্টা ও লক্ষণ এ নির্বাচনেও দেখা যায়নি।
ভোটের আগে থেকে বিরোধী প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে বরাবরের মতো বাধা পেয়েছেন। অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের কারণে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বল প্রয়োগ করে গেছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও এই সুযোগ পেয়েছেন। ফলে প্রচারণার শুরু থেকে ক্ষমতাসীন দলের বিভক্ত অংশগুলোর মধ্যে আধিপত্যের লড়াই চলছিল। নির্বাচনের দিনেও একই সন্ত্রাস দেখা গেল। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার একজন বিজয়ী ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। গাইবান্ধায় ভোট শেষে ব্যালট বাক্স ও মালামাল নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাবের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ফেনীর দাগনভূঞার একটি কেন্দ্রে ককটেল হামলায় এক আনসার সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার যানবাহনে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এবারের নির্বাচনে একটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশত কড়াকড়ি অবস্থান। বাইরে তাদের ব্যাপক তোড়জোড় দেখা গেছে। মূলত কেন্দ্রের ভেতরে ভোটের সুস্থ পরিবেশ ছিল না। জালভোট গ্রহণ, বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করার ঘটনা আগের মতোই ছিল। তাদের জোরপূর্বক বের করে দেয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা আগের মতোই বহাল ছিল। ইভিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে দেখা গেল একটা ভিন্ন দৃশ্য। বুথের মধ্য থেকে নৌকার পক্ষে ভোটদান নিশ্চিত করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা ভোটারদের পক্ষ থেকে ইভিএমের বাটন চেপেছে। একইভাবে ব্যালেটের মধ্যে নৌকায় সিল মারায় বাধ্য করা হয়েছে জায়গায় জায়গায়।
এ নির্বাচনের আরো একটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল মানুষের প্রতিবাদের প্রবণতা কমে যাওয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার তাগিদও মানুষ ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রথমে সমান প্রচারণার সুযোগ পায়নি, পরে দেখা গেল তারা নির্বাচনের দিনও নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ কিংবা ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করার জন্য সক্রিয় ছিল না। নির্বাচনের পরিবেশ অনেকটাই সন্ত্রাসের কাছে আত্মসমর্পণ হয়ে যাচ্ছে। জবরদস্তিমূলক ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য বিএনপি পাঁচটি পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনে মাত্র চারটি পৌরসভায় তারা মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। ৪৬টি পৌরসভায় জিতেছে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছে ৯টি পৌরসভায়। তবে তাদের মধ্যেও বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতির যে প্যাটার্ন তাতে এমন ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচনের পরিবেশ দিতে সমর্থ হতো তাহলে ফলাফল নিয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
নির্বাচন কমিশনের সচিব দাবি করেছেন পৌরসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণ হলেই একটি নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু হয় না। নির্বাচনী পরিবেশের যে চিত্র সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যাচ্ছে তাতে ব্যাপারটি বোঝা যায়। জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য থেকেও তার সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এসে মন্তব্য করেছেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না’। তিনি এ বক্তব্যের পক্ষে সরেজমিন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভেঙে পড়া নির্বাচন ব্যবস্থার সাক্ষী। নতুন প্রজন্মের অনেকে রয়েছে একযুগ পার হয়ে গেলেও একবারও ভোট দেয়ার সৌভাগ্য তাদের হয়নি। সবাই চান প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আবার দেশে ফিরে আসুক। এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো দায়-দায়িত্বহীন থাকতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement