২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনার চেয়ে বেশি মৃত্যু অসংক্রামক রোগে

সব ব্যাধির সুচিকিৎসাই কাম্য

-

করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ নামের ভয়াবহ মহামারীতে নভেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ছয় হাজার ৬৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীতে এ যাবৎ প্রায় ৯ লাখ বনি আদম প্রাণ দিয়েছেন এ মহামারীতে। অপর দিকে, আমাদের দেশে কয়েকটি অসংক্রামক রোগে বছরে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। এসব মারাত্মক ব্যাধির মধ্যে আছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি। দেখা যায়, করোনাভাইরাসের চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ এসব রোগ। সাধারণ মানুষকে এই রোগগুলো থেকে বাঁচাতে বিশেষত কমিউনিটি ক্লিনিকের সঠিক তথ্য ব্যবস্থাপনা আর যথাযথ সেবাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান জাইকার সহায়তায় ঢাকায় ‘দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ (ডিএসকে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ডিএসকে পরিচালকের স্বাগত বক্তব্যের পর মফস্বলের চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য সংগঠকসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন।
সভায় জানানো হয়, এ দেশে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের অপমৃত্যু হচ্ছে। তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং দৈহিক অক্ষমতাসমেত কয়েকটি সাধারণ স্বাস্থ্যঝুঁকির পরিবর্তন ঘটালে এ ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুহার হ্রাস করা যায়। আরো বলা হয়েছে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর মোট যত মানুষ মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগব্যাধি যা ‘অসংক্রামক’রূপে পরিচিত। অথচ বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর কাক্সিক্ষত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক এই রোগগুলো। এর ক্ষতির মাত্রা হ্রাস করতে ‘জাইকা’ এ দেশে পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। এ জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার ও নরসিংদী জেলার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে। এতে এমন ব্যবস্থা থাকছে যেখানে কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, বিশেষত উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সুচিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে ‘সংহত পরিষেবা’ হিসেবে। এই প্রকল্পটি গুরুত্ববহ বিধায় এর কাজ হয়েছে করোনাকালের কঠিন সময়েও। তখন হাতে সময় কম থাকলেও প্রকল্পের ফলাফল উল্লেখ করার মতো। আলোচ্য প্রকল্পের নাম ‘স্বাস্থ্য’ (ঝযধংঃড়).
বাংলাদেশে এখনো করোনা মহামারী চলছে অন্যান্য দেশের মতো। তদুপরি এবার শীতের মধ্যে এর নতুন তরঙ্গের শঙ্কায় সবাই শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। তবে শুধু এ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না। একই সময়ে বিশেষ করে অসংক্রামক ব্যাধিগুলো, মশকবাহিত ডেঙ্গু মহামারী ও যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। তাই মহামারী কোভিডের মতো সুচিকিৎসার যাবতীয় সুবিধা থাকতে হবে রাজধানী থেকে মফস্বল পর্যন্ত। সে মোতাবেক দেশের হাসপাতালগুলো তৈরি রাখতে হবে এখন থেকেই। অন্যথায়, ভাইরাসের পাশাপাশি আরো কয়েকটি গুরুতর রোগে প্রতি বছর বিপুল প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষতি থাকবে অব্যাহত।


আরো সংবাদ



premium cement