২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জলবায়ু তহবিলের অর্থ আদায় করতে হবে

প্যারিস চুক্তির সুফল দেখা যাচ্ছে

-

বিশ্বের তাপমাত্রা কমে আসছে বলে সুখবর পাওয়া গেছে। গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হচ্ছে গোটা পৃথিবী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনায় পরিণত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত। প্রলয়ঙ্করি ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রবল বন্যা, খরা, দাবদাহ বিশ্ববাসীর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিক জনজীবনও দুর্বিষহ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের জাপানের কিয়োটোতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ‘কিয়োটো প্রটোকল’ নামের সেই উদ্যোগে কয়েকটি দেশকে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু সেটি সফল হয়নি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতার কারণে অন্য দেশগুলোও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তেমন গা করেনি। এরপর জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্বের সব দেশের নেতারা একটি জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ নামের এই উদ্যোগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ স্বাক্ষর করে। এতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন জানা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে যাচ্ছে।
শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্রেকার’ জানিয়েছে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে চলেছে এবং চলতি শতকের শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ১ সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী দেশগুলোর অন্যতম চীনসহ অন্যান্য দেশ যেভাবে বিষয়টির ওপর কাজ করছে তাতে তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত কমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রও দূষণের তালিকায় শীর্ষস্থানে। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এখন জো বাইডেন জলবায়ু ইস্যুতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে সুফল মিলবে বলে মনে করছে ক্লাইমেট ট্রেকার গ্রুপ।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আগে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল। বিশ্লেষকরা তখন বলেছিলেন, এ হারে তাপমাত্রা কমলে পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ শতাংশ হারে কমিয়ে আনার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এই চুক্তি হওয়ার পর দেশগুলো গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে কাজ করতে শুরু করে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট ২০৬০ সালের মধ্যে তার দেশের দূষণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। তবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশটির দূষণ অব্যাহত থাকবে বলে জানান। জাপান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৫০ সালের মধ্যে দূষণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বিশ্বজুড়ে শিল্প-কারখানা, যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল ব্যবহারের ফলে নিসৃত কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস। এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী শিল্পোন্নত বিশ্বের দেশগুলো। প্যারিস চুক্তির পর দেশগুলো বিকল্প জ্বালানি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করে। নিঃসরণরোধী প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়। তেলের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে আসে সৌরশক্তি এবং ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইডকে তরল জ্বালানিতে রূপান্তরের প্রযুক্তি। এগুলো এখনো ব্যাপক আকার ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠেনি বটে, তবে বিশ্বের ভয়াবহ দূষণ রোধে আশার সঞ্চার করছে। নতুন সব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে থাকায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২১০০ সালে বিশ্বের তাপমাত্রা গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে যা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে গরিব দেশগুলোকে সাহায্য করার অঙ্গীকার ছিল। এ জন্য বিশ্বের দূষণের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলো অর্থ দিতে সম্মত হয়। পরে সেই অর্থ দেয়া নিয়ে কিছু বিতর্কের অবতারণা হয়েছে। তবে মূল অঙ্গীকার থেকে দেশগুলো সরে আসেনি। বাংলাদেশ জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে। তাই এই ‘জলবায়ু তহবিল’ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লবিং করে হলেও বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে প্রাপ্য অর্থ আদায় করে আনতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement