২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রবাসী কর্মীদের দেশে ফিরে আসা

-

চাই জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারীর বিস্তার এবং অন্যান্য কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফিরে আসা অব্যাহত রয়েছে। গত সাড়ে সাত মাসে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাইসহ ২৮টি দেশ থেকে পৌনে তিন লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কাজ না থাকা, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, প্রতারিত হওয়া এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া বা ইকামা (কাজের অনুমতি) না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এদের বেশির ভাগই প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় ফিরেছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
সরকারি হিসাবে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৭২ হাজার ১৮৫ জনেরও বেশি প্রবাসী কর্মী স্বদেশে ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৪১ হাজার ১৫২ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৩৩ জন নারী। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, করোনা মহামারীর কারণে বেশির ভাগ দেশ ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করায় বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া চুক্তি বা চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়া, ছুটিতে আসা কিংবা অনিয়মিত হয়ে পড়া শ্রমিকরাও তাদের অন্তর্ভূক্ত। যারা কাজ হারিয়ে বেকার ও নিঃস্ব অবস্থায় ফিরেছেন তাদের নিয়েই মূলত ভাবতে হবে। যাদের চাকরি ছিল কিন্তু দেশে ফিরে আটকে পড়েছেন, তারা ফিরে গিয়ে আবার চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন কি না সেটিও উদ্বেগের কারণ। সৌদিফেরত শ্রমিকদের ফিরে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছে এবং তার খুব একটা সুষ্ঠু সমাধান হয়নি।
জানা যায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই এটি ছড়িয়ে পড়েছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ নানা দেশে। ওই দেশগুলোতে বছরের শুরুর দিকেই লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যান প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে যারা ‘অবৈধ’ভাবে ছিলেন তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। আবার বৈধ শ্রমিকদের অনেককে কোম্পানি থেকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে শ্রমিকদের দেশে ফেরা কমিয়ে আনা যায়। এ বিষয়ে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের মধ্যে তৎপরতা সীমিত না রেখে অর্থনৈতিক এবং কর্মসংস্থানের বিষয়েও কূটনীতিকদের সমান গুরুত্ব দেয়া দরকার। সরকার এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শ্রমিকরা যাতে তাদের কাজের জায়গায় ফিরে গিয়ে কাজে যোগ দিতে পারেন, সেই বিষয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশেই বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে। কিন্তু চিঠি পাঠালেই দায়িত্ব শেষ হয় না। এর পেছনে জোরালো লবি করার প্রয়োজন আছে এবং সেটি করতে পারেন সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ মিশনের কূটনীতিকরা।
এর বাইরে দেশেও কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মহামারীর কারণে যেসব প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়েছেন তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে দুই দফায় মোট ৭০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। ফিরে আসা শ্রমিক ও তার পরিবারের সদস্যরা সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। সে ঋণ দেবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
এসব কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেই আমাদের ধারণা।


আরো সংবাদ



premium cement