২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার বিকল্প নেই

ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি সময়োচিত

-

আমাদের দেশে কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। সংক্রমণ সামান্য কমেছে এবং দৈনিক মৃত্যুর হারও কিছু কম। তার পরও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। মহামারীর প্রথম অভিঘাত এখনো চলছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ‘দ্বিতীয় তরঙ্গ’ শুরু হওয়ার। এ জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। একই সাথে সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিতরণের জন্যও চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ভ্যাকসিন কেনার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
যখন উদ্ভাবিত হবে তখনই যাতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনা যায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের কাছে এই সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তÍফা কামাল এই সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ উদ্যোগ খুবই জরুরি ও সময়োচিত। কারণ করোনা মহামারী কত দিন থাকবে বা কত দিনে এর প্রকোপ কমবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হয়তো তা দীর্ঘমেয়াদে জনগণের বিষম ভোগান্তির কারণ হতে পারে। তাই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের চূড়ান্ত পর্যায় বা ‘পিক’ গত আগস্টে পার হয়ে গেছে। করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রথম রোগী পাওয়া যায় ৮ মার্চ। এপ্রিলে সংক্রমণ হার ১২ শতাংশে ওঠে। ৩১ মে সংক্রমণ হার ২০ শতাংশে পৌঁছায়। পরে ২০ আগস্ট পর্যন্ত এই হার ২০-এর বেশি ছিল। ২১ আগস্ট সংক্রমণ হার কমে ১৮-এর ঘরে নামে। সেই ‘প্রথম ঢেউ’ এখনো শেষ হয়নি। বর্তমানে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের ঘরে আছে। তারা বলছেন, সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক পরামর্শক মুজাহেরুল হক বলেছেন, দেশে প্রথম ঢেউ এখনো মিলিয়ে যায়নি। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।
কেউ কেউ বলেছেন, শীতকালে এমনিতেই ঠাণ্ডার সমস্যা থাকে। সেকেন্ড ওয়েভের তীব্রতা কমাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। করোনা শহর এলাকায় তাণ্ডব বেশি চালাচ্ছে। শহর এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ কাজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করতে হবে। এর অর্থ হলো, পুরো মহামারীকালজুড়েই এর প্রতিরোধে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে কোনো রকম সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার এক ‘বিপুল প্রদর্শনী’ আমরা দেখেছি এই দুর্যোগকালে। ইতোমধ্যে অবস্থার খুব উন্নতি হয়েছে, এমন নয়। তবে কিছুটা উন্নতি যে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোগীর লক্ষণ বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দেয়ার অভিজ্ঞতা বেড়েছে। এসব কারণে সংক্রমিতদের নিরাময়ের সম্ভাবনা বেড়েছে। কিন্তু এতে তুষ্ট হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। বিশ্বের অনেক দেশেই করোনা এখনো রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ হিমশিম খাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থতার দায়ে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের গদি উল্টে যায় কি না, এমন জল্পনা চলছে।
আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। শীত মৌসুম সামনে রেখে এখন গবেষকরা বলছেন, দেশটিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। তবে সবাই যদি বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরে তা হলে হয়তো এক লাখ ৩০ হাজারের মতো মানুষের জীবন বাঁচানো যাবে। এর অর্থ হলো, মাস্ক পরলেও মৃত্যু হতে পারে তিন লাখ ৭০ হাজার মানুষের। দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এই বৈশ্বিক মহামারী বিদায় নিচ্ছে, এমন মনে করা যায় না।
অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া আমাদের জন্য জরুরি। ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আসার আগেই জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে বাধ্য করার কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement