পিছিয়ে যাওয়াই নিয়তি!
- ২০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
ইন্টারনেট ব্যবহারে কতটুকু স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ? তারা কি যেকোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন? ইচ্ছামতো যেকোনো সাইট বা অনলাইন প্লাটফরম থেকে তথ্য নামিয়ে নিতে পারেন? সামাজিক মাধ্যমে নিজের বিষয় বা কনটেন্ট আপলোড করতে পারেন? জবাবটা ইতিবাচক নয়। সব সাইটে অবাধে বিচরণের স্বাধীনতা বাংলাদেশীদের নেই। মত প্রকাশের বাধা হয়ে আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। পছন্দের অনেক সাইট সরকার নিরাপত্তা আইনের অজুহাতে বন্ধ করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো বিষয়ে নিজের কনটেন্ট আপলোড করা হলে দেখা যাবে মুহূর্ত পরই সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারিত হয়েছে। এসব কারণেই বৈশ্বিক এক জরিপে বলা হয়েছেÑ বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা আরো সঙ্কুুচিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নজরদারি প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশ ইন্টারনেট স্বাধীনতায় দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মহামারীকালে দেশজুড়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার বেড়েছে। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর কথিত অভিযোগে ৫০টি ওয়েবসাইট সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছে। তাদের কাছে মোবাইলের সিম বিক্রি বন্ধ করেছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে এমন একটি সংবাদমাধ্যমও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফ্রিডম হাউজ এটাও বলেছে, বাংলাদেশে তাদের জরিপ চলাকালে অনলাইন কার্যক্রমের কারণে শারীরিক সহিংসতার একাধিক ঘটনাও তারা দেখেছেন।
২০১৯ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ৬৫টি দেশে জরিপ চালিয়ে সংস্থাটি বলেছে, গত এক বছরে ২ পয়েন্ট পিছিয়ে বাংলাদেশ এখনো ইন্টারনেট ব্যবহারে ‘আংশিক স্বাধীন’ একটি দেশ। প্রতিবেদন অনুসারে ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ ২৯টি দেশ ইন্টারনেট ব্যবহারে ‘আংশিক স্বাধীন’। বাংলাদেশও সেসব দেশের কাতারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, ইতালি, জার্মানিসহ ১৫টি দেশের মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে ‘স্বাধীন’ বলে জানিয়েছে ফ্রিডম হাউজ। পাকিস্তান, চীন, কিউবা, ইথিওপিয়াসহ ২২টি দেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা একেবারেই নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর মধ্যে সরকার অনলাইন বিচরণক্ষেত্র কমানো ও সমালোচনাকারীদের দমাতে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বহু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে, নির্দিষ্ট করে টার্গেট করে নিপীড়ন বাড়িয়েছে, সাংবাদিক ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ইন্টারনেটে কনটেন্ট পরিবর্তন করা ও প্রযুক্তিগত আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে সরকার কতটা সক্রিয় সেটিও বেরিয়ে এসেছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা বর্তমান সরকারের শাসনকালে প্রায় প্রতি বছরই সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। ফ্রিডম হাউজেরই প্রকাশিত ‘ফ্রিডম অব দ্য নেট ২০১৬’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চার বছর ধরেই অর্থাৎ ২০১২ সাল থেকে ক্রমাগত পিছিয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি পেছানো পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। সেই পশ্চাৎগতি এখনো অব্যাহত আছে। বিশেষজ্ঞরা তখন বলেছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিশেষ একটি ধারার কারণে মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশে ভয় পান। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট গুটিকয়েক প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সে কারণেও ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষের স্বাধীনতা কমছে। সম্প্রতি এ প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ আরো বেড়েছে। তাই বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীন হবে এমন আশা করা কঠিন। যে দেশে বাক-ব্যক্তি-মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা মৌলিক মানবাধিকারেরই স্বীকৃতি নেই, সেখানে ইন্টারনেট স্বাধীনতা পুরো মাত্রায় থাকবে এমন আশা বাতুলতা মাত্র। আমাদের মনে আছে, ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্টে’ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়, মোবাইল ফোন, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ১৪১টি দেশের মধ্যে ছয় ধাপ পিছিয়ে ১০৮ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ। সেই ধারার কোনো পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। আফসোস, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এমন এক ব্যক্তি এখন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন যিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবক্তা হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। সব বিষয়ে কেবল পিছিয়ে যাওয়াই কি বাংলাদেশের নিয়তি!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা