২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গরু চোরাকারবারিতে বিএসএফ

এ অভিযোগে বাংলাদেশী হত্যা কেন

-

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যা করে। এ ব্যাপারে সীমান্তের বাংলাদেশীদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে ঘিরে থাকা ভারত সব জায়গায় এমন আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেছে। প্রতিবেশী উভয় দেশের সরকারের মনোভাব এ ব্যাপারে পুরো বিপরীত। তাদের মতে, উভয় দেশ বন্ধুত্বের অনন্য নজির স্থাপন করেছে; কিন্তু সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয় না। তবে হত্যার শিকার হয় শুধু বাংলাদেশের নাগরিক। ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৯ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ভারত এ ব্যাপারে একটি যুক্তি দেখাতে চায়, গরু চোরাকারবারি বা সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে তারা বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। একজন চোরাকারবারি বা সন্ত্রাসীকে হত্যা করা বৈধ কিংবা আইনসিদ্ধ কি না এ ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিবাদ দেখা যায় না। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এক তদন্তে জানাচ্ছে, বিএসএফ নিজেই চোরাকারবারের সাথে জড়িত।
ঢাকার পিলখানায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিজিবি ও বিএসএফের ৫০তম সীমান্ত সম্মেলন। এ সম্মেলনে অন্যতম এজেন্ডা ছিল সীমান্ত হত্যা। এবারো বিএসএফ প্রধানের পক্ষ থেকে একই প্রতিশ্রুতি। সেটি হচ্ছে সীমান্ত হত্যা ঠেকাতে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করবেন। বৃহৎ দেশ ভারতের একটি দায়িত্বশীল সীমান্ত বাহিনীর প্রধান যখন এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেন সেটি কতটা উপহাস হয়ে দাঁড়ায় যখন এরপরে আবারো সীমান্তে বাংলাদেশীদের লাশ পড়ে। এর আগে কয়েক ডজনবার যখন বিএসএফ প্রধান একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলোর তাৎপর্য ও গুরুত্ব কী ছিল! বিএসএফের পক্ষ থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করা হয় সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা দমাতে তারা বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। বাস্তবে দেখা গেছে, সীমান্তে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশ আটক রাখার কারণে লাশে পচন ধরেছে। এমন ঘটনা একবার দু’বার নয়, শত শতবার চর্চা হয়ে গেছে। এবারের সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যার ব্যাপারটি আলোচনার টেবিলে রাখা হলেও সেটা নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ ওঠানো হয়নি। বরং আমরা দেখলাম বিজিবি প্রধানের কণ্ঠে সীমান্ত হত্যার জন্য চোরাকারবারির দায় চাপিয়ে দেয়া হলো। বাংলাদেশীদের হত্যাকারী ভারতীয় বিএসএফও একই অভিযোগ করে হত্যা জায়েজ করতে চায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, গরু চোরাকারবারির সাথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কর্মকর্তারা জড়িত। তাদের সাথে রয়েছে স্থানীয় সিন্ডিকেট। এ ধরনের একটি সিন্ডিকেটের গরু চোরাকারবারি করার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। ওই তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, ৩৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সাবেক কর্মকর্তা সতীশ কুমার চোরাকারবারিদের সহযোগী ছিলেন। প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, এক স্থানীয় চোরাকারবারি প্রতিটি গরুর জন্য বিএসএফ কর্মকর্তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে দিতেন। সংশ্লিষ্ট কাস্টম কর্মকর্তাদের তারা দিতেন ৫০০ টাকা করে। ইন্ডিয়ান কাস্টমস কর্মকর্তাদের ১০ শতাংশ হারে ঘুষ দিতেন তারা। সতীশ কুমারের এক সন্তান ওই চোরাকারবারি চক্রের কোম্পানিতে চাকরি করতেন মাসিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপিতে। এসব অভিযোগের তথ্য রয়েছে সিবিআইয়ের কাছে। সিবিআই তাদের সামান্য তদন্তে এ তথ্য পেয়েছে। বাংলাদেশের তিন দিকে সীমান্তে বিএসএফের পুরো কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।
সীমান্তে হত্যা জায়েজ করার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গরু চোরকারবারকে উত্থাপন করে। সিবিআইয়ের এই তদন্তে জানা যাচ্ছে, খোদ বিএসএফই চোরাকারবারে জড়িত। অন্য দিকে আমরা জানি, ভারত থেকে ভবঘুরেদের আমাদের দেশে পুশইন করা হয়, সীমান্তের ওপারে কেবল বাংলাদেশে পাচার করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের কারখানা। এগুলো থেকে সরবরাহ করা মাদক সেবন করে আমাদের যুব ও তরুণ সম্প্রদায় ধ্বংস হচ্ছে। এ অবস্থায় সীমান্তে একতরফা বাংলাদেশী হত্যার পক্ষে গরু চোরাকারবারকে ভারত কিভাবে যুক্তি হিসেবে দেখাতে পারে? জনগণ চায় বিজিবি কর্তৃপক্ষ যখন সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা বলে, এসব বিষয় যেন তাদের মাথায় থাকে। কেবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে বিজিবির শীর্ষ কর্তৃপক্ষের কথা বলা উচিত বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement