২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চার পাশের নদীর পানি বাড়ছে

বন্যার ঝুঁকির মুখে ঢাকা

-

দেশের ২৬ জেলা বন্যাকবলিত। রাজধানী ঢাকায়ও এখন বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি বাড়ছে ঢাকার চার দিকে। ফুলেফেঁপে উঠছে চার পাশের নদ-নদী। দিন যত যাচ্ছে ততই একাধিক নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত এবং উজানের পানি নেমে আসায় বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বংশী, তুরাগ, কালিগঙ্গা ও বালু নদে পানি বেড়েছে। এতে ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলে বেড়িবাঁধ থাকলেও পূর্বাঞ্চলে বন্যা ঠেকানোর মতো বাঁধ বা অন্য কোনো অবকাঠামো না থাকা, বেশির ভাগ নিচু এলাকার জলাভূমি ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠায় অনেক স্থান ডুবে গেছে।
এ দিকে দেশজুড়ে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। থামছে না আকাশভাঙা বৃষ্টি। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীতে। বেশির ভাগ সড়কে কোমর পানি দাঁড়িয়ে যায়। এই পানি নামার কোনো জায়গা প্রায় নেই। কারণ ঢাকার চার পাশের নদীগুলোও পানিতে টইটম্বুর। পাশাপাশি উজানের জেলাগুলোর বন্যার পানি নেমে আসবে শিগগিরই। তখন ঢাকার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে পানি চলে আসতে পারে। উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে পানি বাড়তে শুরু করেছে ঢাকার নিম্নাঞ্চলে। সাঁতারকুল, নন্দীপাড়া, নওয়াজবাগ এলাকার অনেক মানুষ এখন পানিবন্দী। প্রবল বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যবর্তী ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডিএনডি বাঁধ এলাকাতেও বৃষ্টির পানি জমে বন্যার রূপ নিয়েছে।
এরই মধ্যে জাতিসঙ্ঘের একটি দফতর জানাচ্ছে, ১৯৮৮ সালের পর বাংলাদেশের এবারের বন্যা বেশি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। জুলাই পেরিয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেও বন্যার পানি থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক এই সংস্থার হিসাবে, সামনের সপ্তাহে বাংলাদেশের মোট জেলার অর্ধেক বন্যাকবলিত হবে অর্থাৎ ৩০ থেকে ৩২টি জেলায় বন্যা আঘাত হানতে পারে। তারই প্রতিধ্বনি দেখা যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যে। তারা বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে বালু নদের ডেমরা পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উত্তরের তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টেও আজ পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার পাশের নদ-নদীগুলোর মধ্যে তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গায় পানি দ্রুত বাড়ছে। ঢাকা শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন লাইন বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে এবং পূর্বাংশের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন পড়েছে বালু ও শীতলক্ষ্যায়। কিছু অংশের নিষ্কাশন নালা হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন লেকে পড়েছে। ফলে ঢাকার চার পাশের নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে গেলে রাজধানীর বড় অংশের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর বিপদসীমা অতিক্রম করলে খালগুলো দিয়ে পানি নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। সেগুলো হলো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি আরো বাড়বে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ ছাড়া যমুনা নদীর পানিও আজ থেকে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে জরুরি সভা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র । তিনি বলেছেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব পালনে ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ওপর যেসব দায়িত্ব ন্যস্ত আছে সেগুলোর বিষয়ে তিনি কতটা সফল তা এখনো প্রমাণসাপেক্ষ। তাকে এ মুহূর্তে ঢাকার সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়টি ভাবতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement