২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঈদের প্রাক্কালে বেতন-বোনাসের অনিশ্চয়তা

গার্মেন্ট শ্রমিকদের আবার দুর্ভোগ

-

করোনা মহামারীজনিত সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সরকার বিরাট অঙ্কের ‘প্রণোদনা প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে। সে মোতাবেক, বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই এর সুফল ভোগ করছেন। এর পরও অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবারও ঈদ উপলক্ষে পোশাক বা গার্মেন্ট শিল্পের বেশির ভাগ শ্রমজীবী বেতন-বোনাস পাবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মাঝে প্রহর গুনছেন। অপর দিকে, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ভাতা পরিশোধের জন্য সাহায্য চেয়ে মালিকদের দু’সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে।
পত্রপত্রিকার খবরে আরো বলা হয়েছে, বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান জুন মাসের মজুরি দিয়েছে। তবে বেশির ভাগ কারখানাই জুনের মজুরি এবং সেই সাথে আসন্ন ঈদুল আজহার বোনাস ও চলতি জুলাই মাসের আংশিক মজুরি দেয়ার ব্যাপারে বেশ সমস্যায় পড়তে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। এর আগে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা সরকার দিয়েছে। অবশ্য মাস দুয়েকের মধ্যেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। জুন মাসের মজুরির জন্য ২৯০৩ কোটি টাকা দরকার। বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে পোশাক শ্রমিকদের জুনের বেতন দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। এ ছাড়া আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি শোধ করার জন্য সরকার আহ্বান জানিয়েছে গার্মেন্ট মালিকদের প্রতি।
নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা আরো তিন মাসের মজুরির অর্থ চেয়েছেন সরকারের কাছে। বরাদ্দ করা তহবিল থেকে জুন মাসের মজুরি দেয়ার নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যাংকের ‘গড়িমসির ফলে’ বহু উদ্যোক্তার এ টাকা পেতে সমস্যায় পড়ার অভিযোগ রয়েছে। বিকেএমইএ’র একজন ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না। টাকা না পেলে জুলাই মাসের বেতন-বোনাস দেয়া কঠিন হবে।’ এমতাবস্থায়, ঈদবোনাস দূরের কথা, চলতি মাসের মজুরি পাওয়া নিয়েই অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের মাঝে। এই শ্রমিকদের সংগঠনের নেতারা বলেছেন, জুনের বেতন, ঈদবোনাস এবং জুলাই মাসের অন্তত অর্ধেক মজুরি দেয়ার জোরালো দাবি সত্ত্বেও মালিকপক্ষ মুখ খুলছে না। অথচ আইন অনুযায়ী প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই আগের মাসের মজুরি দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কর্মীদের বেতন-ভাতা যথাসময়ে না দেয়ার অজুহাত দেখানো হলেও বেশির ভাগ গার্মেন্ট কারখানাই করোনা সঙ্কট কাটিয়ে উঠছে। ফলে তাদের ওয়ার্ক অর্ডার বেড়েছে। এমনকি, বড় বড় গার্মেন্ট কারখানাতে কাজের সক্ষমতা শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) নিয়ে রফতানির নতুন সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার পোশাকের প্রধান প্রধান রিটেইলার ও ব্র্যান্ড আউটলেট আবার চালু হয়েছে। এতে এখন ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে বাংলাদেশের বহু গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও জুন মাস থেকে ‘কোনো কোনো খাতে’ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা স্বীকার করেছেন। গার্মেন্ট শিল্পপতিদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, তাদের কারখানাগুলোর ক্রয়াদেশ বছর শেষে বাড়তে পারে।
তবে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ হয়নি। গত ছয় মাসে গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানার ১০ হাজার ৭৩৬ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাই শুরু হয়েছিল করোনাসঙ্কটের অনেক আগে, বছরের শুরু থেকেই। শিল্পাঞ্চল পুলিশও বলেছে, ছয় মাসে ছাঁটাই হয়েছে গাজীপুরে এসব কারখানার ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক।
প্রতি বছরই ঈদের প্রাক্কালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতা-বোনাস নিয়ে মালিকদের টালবাহানা আর শ্রমিকদের আন্দোলন-উত্তেজনার কথা শোনা যায়। এবার মহামারী শ্রমজীবী নি¤œবিত্ত মানুষের কোমর ভেঙে দিয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি এবং ঈদবোনাস নিয়ে আর অতীতের পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই সবাই আশা করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement