২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাড়ির চেয়ে হাসপাতালে বেশি মৃত্যু

করোনা রোগীদের সেবা প্রশ্নবিদ্ধ

-

দেশে করোনা রোগীরা হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সত্যতা মেলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে বেশি মারা যাওয়ার ঘটনায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া কয়েক দিনের মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করলে এ তথ্যই প্রমাণিত হয়, হাসপাতালে করোনা রোগীর মৃত্যু বেশি হচ্ছে। সে তুলনায় বাড়িতে মৃতের সংখ্যা অনেক কম। হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না বলে তীব্র সমালোচনার মুখে দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনা মোকাবেলায় ‘হযবরল’ অবস্থার জন্য সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা।
তবে আমাদের দেশে এটিও বাস্তবতা যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু রোগী ‘সেপসিস’ পরিস্থিতিতে মারা যাচ্ছেন। ‘সেপসিস’ এমন একটি অবস্থা যখন কোনো জীবাণু একজন মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে শরীরের টিস্যুর ক্ষতি, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া এবং সবশেষে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ল্যানসেট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে এক-চতুর্থাংশ মৃত্যুর কারণ ‘সেপসিস’। ২০১৭ সালে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হারিয়ে মারা গেছেন চার কোটি ৮৯ লাখ মানুষ। করোনাভাইরাসের মৃত্যুরও বড় কারণ সেপসিস। আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা এই ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকছেন। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ছত্রাকসহ বিভিন্ন অণুজীব সেপসিস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। রক্তচাপ কমে যাওয়া ও সেই সাথে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, জ্বর, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, হঠাৎ প্রচণ্ড অসুস্থবোধ হওয়া; এমন সব পরিস্থিতিও সেপসিসের লক্ষণ। এমন রোগীকে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, শরীরে রক্ত সঞ্চালন ও ‘ভেন্টিলেশন’ নিশ্চিত করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে কৃত্রিম ‘কোমা’য় রাখা হয়। রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল রাখতে দিতে হয় বিভিন্ন থেরাপি। কিন্তু এ ধরনের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তার চেয়েও বড় বিষয়, আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও অনেক রোগীকেই এই সেবা দেয়া সম্ভব হয় না সীমিত সুযোগের কারণে। ফলে হাসপাতালে নিলেও করোনা রোগী অনেকে মারা যান।
বাড়ির চেয়ে হাসপাতালে বেশি মারা যাওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভাষ্য, সাধারণত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা হয় শেষ মুহূর্তে। করোনা হলে কিছু রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। আবার আক্রান্ত ষাটোর্ধ্ব অনেকের কিডনি সমস্যা, হার্টে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থাকে। ‘কো-মরবিডিটি’ যাদের থাকে তাদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। তাদের একটি অংশকে হাসপাতালে আনা হলেও মৃত্যুবরণ করছেন। যারা গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন তাদেরই কেবল হাসপাতালে আনা হচ্ছে। এদের হার ৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে মৃত্যুটা বেশি।
আমাদের দেশে শুরু থেকেই কোভিড-১৯ শনাক্তে পরীক্ষার সুযোগ অপ্রতুল। জনসংখ্যার অনুপাতে করোনা পরীক্ষার দিক থেকে বিশ্বের ২১৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৬তম। দেশের ৪২টি জেলায় এখনো শনাক্তের পরীক্ষাগার নেই। এটিই একমাত্র কারণ নয়; দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখানোর সরকারি মানসিকতাও এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। করোনা শনাক্তের ব্যাপারে সরকারের একটি অঘোষিত কৌশল হলো, কম টেস্ট, কম রোগী দেখানো। গত কয়েক দিনের নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। সরকারের এমন প্রবণতা সম্পর্কে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ‘পরীক্ষা কম করে সংক্রমণ পরিস্থিতি লুকানোর চেষ্টা সবার জন্যই বিপদ ডেকে আনবে।’ ফলে দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
দেশে করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই বলা যায়, সামনের বেশ কিছু দিনে আরো অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। আর মৃতের সংখ্যাও যে বাড়বে, তা না বলাই ভালো। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মৃত্যু কার কখন হবে, তা আমরা জানি না। তবে ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement