২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম স্থবির

কিছুটা সচল রেখে ক্ষতি কমানো যায়

-

চট্টগ্রাম সামুদ্রিক-বন্দর বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির লাইফলাইন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এ বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্দরের অধীনে যে ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো রয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, লোকবলের অভাবেই এই স্থবিরতা। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল জোগান দেয়া যাচ্ছে না। কাঁচামালের অভাবে বন্ধ থাকছে শিল্পকারখানা। অন্য দিকে বন্দরের কনটেইনার আটকে পড়ায় ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের গচ্চা দিতে হচ্ছে। করোনা মোকাবেলার অংশ হিসেবে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার মাধ্যামে শিল্প ও ব্যসায়িক কর্মকাণ্ডে ক্ষতি কমানো যায় কি না সরকার সেটি বিবেচনা করে দেখতে পারে।
দেশব্যাপী চলছে আপৎকালীন ১০ দিনের ছুটি। এ সময়ে বন্দর থেকে খাদ্যপণ্য ও ওষুধসামগ্রী ছাড়া অন্য কিছু খালাস করছে না কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল কনটেইনার আটকে গেছে। ১০ দিন পর সরকার আপৎকালীন ছুটির মেয়াদ উঠিয়ে নেবে কি না নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বরং বিচ্ছিন্নকরণের আরো নতুন নতুন ঘোষণা আসতে পারে। বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণের অবস্থা এখনো ভয়াবহ। এর বিস্তার আরো ব্যাপক হয়ে উঠলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সরকার স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে। জাতীয় স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখাও অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান অবস্থায় প্রতিদিন বন্দরে নতুন নতুন পণ্য আমদানি হবে। আসবে নতুন নতুন জাহাজ। কনটেইনারের চাপে বন্দর অচল হয়ে পড়বে। অন্য দিকে বহির্নোঙরে সৃষ্টি হবে জাহাজজট। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিল্পবাণিজ্যে সার্বিক স্থবিরতার মাধ্যমে অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিকল্প কিছু ভাবনা সরকারের থাকা দরকার।
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা কনটেইনার জাহাজ থেকে নামার পর তা খালাস করতে চার দিন ফ্রি টাইম থাকে। এর পর থেকে বিভিন্ন স্তরে উচ্চহারে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় আমদানিকারকদের। ২০ ফিট কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে ছয় ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১২ ডলার এবং তৃতীয় সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার করে ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়। ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য এ জরিমানার হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। অন্য দিকে, যথাসময়ে মাল খালাস করে কনটেইনারগুলো শিপিং লাইনকে বুঝিয়ে দিতে না পারলেও একই ধরনের অর্থ গচ্চা দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এ জরিমানার হার আরো বেশি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার কনটেইনারের স্তূপ জমেছে বলে জানা যাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে সেটি বন্দরের ধারণ ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে।
ব্যবসায়ীরা এখন সব দিক থেকে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তাদের ক্ষতি যদি কিছুটা কমিয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যায় তাহলে খুবই ভালো হয়। ওষুধ ও নিত্যপণ্যের বাইরে আরো কিছু পণ্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খালাসের তালিকায় আনা যায় কি না সেটি সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারে। বিশেষ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য যেসব কাঁচামাল দরকার সেগুলোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকার চাইলে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে কিছু মাত্রায় সচল রাখার উদ্যোগ নিতে পারে। যাতে করে অন্ততপক্ষে বন্দরের কনটেইনার জট এড়িয়ে যাওয়া যায়। অন্য দিকে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সীমার মধ্যে রাখা যায়। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে বন্দরে পণ্য খালাস করতে না পারার জন্য যে জরিমানা দিতে হয় সেটি মওকুফ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement