২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মানুষের ধর্ম

-

প্রতিটি বস্তুরই একটি নিজস্ব ধর্ম আছে। যেমন- পানির ধর্ম নিচের দিকে গড়ানো। আগুনের ধর্ম পুড়িয়ে ফেলা। ঠিক তেমনি মানুষেরও ধর্ম আছে। মানুষের ধর্ম হচ্ছে মনুষ্যত্ব। এই মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য আমরা সারা জীবন সাধনা করে থাকি। আমাদের স্বভাবকে পরিবর্তনের জন্য সদা চেষ্টা করি। এই স্বভাবকে উন্নত করার মধ্যেই জীবনের চরিতার্থতা।
মানুষের মধ্যে ছয় রিপু আছে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। এই রিপু বা শত্রুগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জাগতিক পাপ-মোহ ও বিষয় বাসনা থেকে বিমুক্ত হয়ে নিজের আপনত্ব লাভ করতে হবে এবং নির্বাণ লাভ করতে হবে। এই আপনত্ব কী? এটি অবশ্য জটিল বিষয়। সহজে বা এককথায় বলা কঠিন। সক্রেটিস বলেছেন, ‘শহড়ি ঃযুংবষভ’, বা নিজেকে জানো। আবার মরমি লোক কবিরাও গানে গেয়েছেন, ‘ও যার আপন খবর আপনার হয় না, একবার আপনারে চিনতে পারলে যাবে অচেনারে চেনা।’
আপনাকে পেলেই সব মূলে যেয়ে তাকে পাওয়া যাবে। তখনই ধর্ম সার্থক হবে। এই নিজেকে ফিরে পাওয়াই ধর্ম সাধনা। মানুষ হলো আলোর সন্তান। যখনি তারা নিজেদের পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে তখন তারা অমরত্ব লাভ করে।

ধর্ম অর্থ কর্ম। ইসলাম মানে কাজ। সব কাজের মধ্য দিয়ে ধর্ম পালন করা যায়। ধর্ম মূলত পড়ে আছে বাস্তব জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে। যেমন মনুষ্য শিশুকে মানুষ করা, এটিও ধর্মের কাজ। ধর্ম দর্শনের একান্ত লক্ষ্য ব্যক্তির সর্বাধিক উন্নতি ও সুখ-সাধন। তাহলে এখানে দেখা যায়; একজন কৃষক ফসল ফলান, শিল্পী গান করেন, সুখ লাভের জন্য এটিও ধর্মের কাজ। শুধু নামাজ পড়াই ধর্ম নয়। আল্লাহকে পাওয়া যায় মানুষের গভীর সত্তায় ভক্তি প্রেম ও কর্ম দিয়ে। আল্লøাহ মানুষেরই সীমাহীন বিস্তৃতি। মানুষের অবয়বে পড়ছে তারই ছায়া। মানুষের মধ্যে তিনি বিরাজমান।
মানুষের মধ্যে নিহিত আছে পরমসত্তা আল্লাহর গুণাবলি অর্জনের অসীম ক্ষমতা এবং সম্ভাবনা। আল্লাহ অর্থ সত্য, হক, ন্যায়বিচার, উত্তমতা ইত্যাদি। আল্লাহ বলতে মানুষ বুঝবে জীবনের এক অন্তহীন অগ্রগতির প্রেরণা। ধর্মের বিধিনিষেধ কোনো নিষ্ঠুর প্রভুর কষ্টদায়ক হুকুম নয়; বরং সেসব হচ্ছে জীবনের উন্নতির দিকে পরিচালনার নিয়ম শৃঙ্খলা। ধর্ম যা জীবনের বিকাশের সহায়ক আর তাই অধর্ম যা ক্ষতিকারক। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তাই আদর্শ। আবার যা আদর্শ সেটিই ধর্ম। ধর্মের এই মূলস্র্রোতকে মনে রাখতে হবে।

ধর্ম অর্থ পাপ বর্জনের সাধনা। মিথ্যার সাথে আত্মার সংগ্রাম। প্রার্থনায় এই কাজের সহায়তা হবে এ জন্য ইসলাম ধর্মে প্রার্থনার ব্যবস্থা। শুধু রোজা-নামাজকেই ধর্ম মনে করে যদি বসে থাকেন তবে পরকালে কোনোমতেই মুক্তি পাবেন না। জেনেশুনে অন্যায় ও মিথ্যা করে সর্বদা মসজিদ ঘরে যাবেন না। যে চোর, ঘুষখোর, প্রতারক, পরনিন্দুক, আহাম্মক, অশিক্ষিত, পরস্বার্থহারী ও বিশ্বাসঘাতক তাদের নামাজ ভালোভাবে হয় না।
নামাজ অর্থ সালাত। সালাত অর্থ প্রার্থনা। প্রার্থনা অর্থ প্রভুর কাছে পাপের অনুশোচনা করা। সত্যের জন্য দুঃখ সহ্য করা। এটিই ইবাদত। এর নামই আল্লাহর উপাসনা। মানুষের মধ্যে দেবত্ব ও পশুত্ব দুই-ই আছে, যদি পশুত্বকে দূর করতে পারেন, তাহলে দেবতাদেরকে অতিক্রম করতে পারবেন। কেবল আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা ও উপবাসই ধর্ম নয়। আত্মায় সত্যের আসন প্রতিষ্ঠা করাই ধর্ম।
যে মুসলমানের বুকে বিবেক, প্রজ্ঞা বা সত্যের বাণী জাগে না সে মৃত। সর্ব পাপমুক্ত হওয়াই ইসলাম। মুসলমানের ধর্ম জীবনের একমাত্র সাধনা পাপকে জয় করা। না বুঝে নামাজ পড়া এও ইসলাম ধর্ম নয়, কোনো ধর্ম নয়। মানুষকে কোনো রকম দুঃখ দেয়া পাপ। আপনার জীবনের দ্বারা, কথা ও ব্যবহারে যদি পৃথিবীতে দুঃখ ও জ্বালা উপস্থিত হয়, তাহলে আপনি পাপী।
পরের দ্রব্যে লোভ করা যাবে না। মানুষকে অন্ন দেয়ার মতো মহাধর্ম আর নেই। দান ব্যতীত নামাজ সিদ্ধ হয় না। জীবনে বেঁচে থাকতেই ধর্ম করে যেতে হবে। দেশের আর্তপীড়িতদের জন্য হাসপাতাল স্থাপন করুন, এতে মানুষের মঙ্গল হয়। অর্থ উপার্জন করুন সেই অর্থ দিয়ে পীড়িত দুঃখীর সেবা করুন। যে আপনাকে আঘাত করেছে, হৃদয়ে বেদনা দিয়েছে, হত্যা করতে এসেছে, তাকে প্রেম করে ভালোবেসে, জীবন দিয়ে প্রতিশোধ নেন। সেই হচ্ছে ধার্মিকের কাজ।

সত্যের সাধনাই মানব হৃদয়ের চরম ও পরম সাধনা। পরম সত্যকে দিনে দিনে প্রতি কাজের ভেতর দিয়ে অনুভব করাই মানুষের শ্রেষ্ঠ সাধনা। কত বিচিত্রভাবে তাকে অনুভব করতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। যিনি যতটুকু এই পরম সত্যকে অনুভব করতে পেরেছেন তিনি তত বড় সাধক, সন্ন্যাসী ও ফকির।
জগতে যা কিছু করেন, পরিবার প্রতিপালন করুন। শিশুর মুখে চুম্বন দেন- মানবচিত্তের এই একমাত্র গুরুতর সাধনা ও আকাক্সক্ষা এর মধ্যেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। সত্যময় আল্লাহ তায়ালাকে হৃদয়ে ধারণ করা, তাতে মিশে যাওয়া, আল্লাহময় হয়ে যাওয়া সর্বপ্রকারের সত্য, সুন্দর, মধুর ও পূর্ণ হয়ে ওঠা এই-ই ইবাদত। জীবনকে আল্লাহর রঙে রঙিন করে তুলতে হবে, সমস্ত চিন্তা, কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে সেই সত্য, সুন্দর ও সুমহানের গুণকে প্রকাশ করতে হবে।

পৃথিবীর যত পাপ-পৃথিবীর যত প্রতারণা, নীচাশয়তা, হীনতা, কাপুরুষতা তাই তো শয়তানের মুখ। প্রতিদিনের ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট ব্যবহার, হাসি রহস্য, একটুখানি সহৃদয়তা, একটি স্নেহের বাক্যে মানুষের মনুষ্যত্ব সূচিত হয়। ধর্মগ্রন্থ কী দীক্ষা দিয়েছে? ইঞ্জিল, জাবুর, তাওরাত, কুরআন এবং পবিত্র হাদিস সমষ্টি কী শিক্ষা দিয়েছে? আপনাকে স্নেহশীল, প্রেমিক হতে বলেনি? কতবার বলেছে, হে মানুষ প্রেমিক হও, পাষাণ হয়ো না।
মনুষ্যকে প্রেম করাই আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এ ছাড়া মানুষের দ্বিতীয় কোনো ধর্ম নেই। মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। মনের হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করতে হবে। পৃথিবীর দুঃখ আপনারা সব ভাই সমানভাবে ভাগ করে নেন।
আপন ভ্রাতার সাথে প্রথম সন্ধি করতে হবে, অতঃপর মসজিদ ঘরে আসুন। প্রতিবেশীর সাথে আত্মীয়তা করুন। প্রতিবেশী আত্মীয়ের চাইতেও আপন। প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখের সাথে নিজের সুখ-দুঃখ মিলিত করুন। তার সহস্র অপরাধ ক্ষমা করুন। তাকে আপনজন বলে গ্রহণ করুন। কারো অনিষ্ট করা উচিত নয়। যে ব্যক্তি দ্বারা মানুষ দুঃখ পায় না, সেই তো ধার্মিক। আল্লাহর আদেশ মা-বাবাকে অমান্য করো না। বাবা-মা কী অবস্থায় থাকেন, কী খান সে সংবাদ কে রাখে? সেই বুড়াবুড়ি শেষকালে সংসারে দয়ার পাত্রপাত্রী।
বিবেক অপেক্ষা আরো একটি জিনিস আছে, তার নাম প্রজ্ঞা। বিবেক মনুষ্যকে প্রতারণা করে না। প্রজ্ঞা দিবালোকের মতো উজ্জ্বল, তার দৃষ্টির সম্মুখে কোনো কুয়াশা নেই, সন্দেহ নেই। প্রজ্ঞা ধ্রুব সত্যকে দর্শন করে। যিনি এই প্রজ্ঞার সন্ধান পেয়েছেন, তিনি পরম চেতনা লাভ করেছেন, তিনি মনুষ্যের নমস্য। অতি অল্প লোকই এই প্রজ্ঞার সন্ধান পায়।


আরো সংবাদ



premium cement
বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা হামাসকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলি প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান যুক্তরাজ্যের প্রথমবারের মতো সিরি-এ ম্যাচে ছিলেন সব নারী রেফারি ফেনীতে তাপদাহে তৃষ্ণা মেটাতে শিবিরের পানি-স্যালাইন বিতরণ ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাংলাদেশে যাদের ইলমে দীন অর্জনের সৌভাগ্য হয়েছে, তারাই প্রকৃত ধনী ৩৩ ইসরাইলির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ৪০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব ইসরাইলের ‘টেকসই প্রস্তাব’ কী হবে হামাসের প্রতিক্রিয়া উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের রাত ১১টার মধ্যে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া কি হোঁচট খেল?

সকল