২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অস্বাভাবিক বিমান ভাড়ায় বেড়েছে হজের খরচ

ওমরায় ৯৮ হাজার হজে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা
-

সরকারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে সাড়ে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনি¤œ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকায় হজ করা যাবে। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। গত বছর বেসরকারিভাবে সর্বনি¤œ প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবার দেড় লাখ টাকা খরচ বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এক লাফে এভাবে দেড় লাখ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিমানভাড়া অস্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ করাকে দায়ী করেছে হাব। এ ছাড়া ডলার ও রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণেও হজের খরচ বেড়েছে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, গত বছর হজে বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ বছর সেখানে বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এতে শুধুমাত্র এ খাত থেকেই হজের খরচ বেড়েছে ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমান এ বছর বিমানভাড়া হাজীপ্রতি দুই লাখ ১০ হাজার টাকা করতে চেয়েছিল। আমাদের প্রতিবাদের কারণে কিছু কমিয়েছে তারা। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। হাব সভাপতি বলেন, বর্তমানে ওমরাহ পালনে গেলে বিমানভাড়া নেয়া হচ্ছে ৯৮ হাজার টাকা করে। আর হজের সময় নেয়া হবে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা প্রায়। অর্থাৎ বিমান এক লাখ টাকা বেশি নিচ্ছে। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর জুলুম। হজযাত্রীদের প্রতিবাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকায় আমরা এর প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি বলেন, হজের সময় ভাড়া বেশি নেয়া প্রসঙ্গে বিমান কর্তৃপক্ষ সৌদি থেকে ফেরার সময় খালি আসাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ৯৮ হাজার টাকা ভাড়া নিলেও এখনো বিমানে ৩০ ভাগ যাত্রী খালি থাকে। তা ছাড়া হজের সময় যাত্রীহীন বিমান ফিরে আসার সময় তাদের জ্বালানি, খাবার, ক্রুসহ বিভিন্ন খাতে খরচ অনেক কমে যায়। আর হজযাত্রী পেতে তাদের কোনো মার্কেটিং খরচও হয় না। তা ছাড়া নিময় না থাকলেও তারা শিডিউল ফ্লাইটে ৩০ ভাগ হজযাত্রী পরিবহন করে। এতে একই বিমানে একজন যাত্রী যাবেন ৯৮ হাজার টাকায় আর হজযাত্রী যাবেন প্রায় দুই লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে। হজের সময় এত অস্বাভাবিক বিমানভাড়া নির্ধারণ কখনো সঠিক হতে পারে না। এখনো সময় আছে বিমান ভাড়া রিভিউ করা উচিত। বিমানভাড়া বেশি ধরার কারণে হজযাত্রী পরিবহনে যুক্ত বিদেশী এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে প্রচুর টাকা বিদেশে চলে যাবে জানিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
হাব সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া নির্ধারণ করছে। এটা সঠিক নিয়ম হতে পারে না। বাস মালিক সমিতি ইচ্ছা করলেও যেমন ভাড়া বাড়াতে পারে না, তেমনি বিমানের ক্ষেত্রেও ভাড়া বাড়াতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করতে হবে। যারা সব খরচের হিসাব যাচাই বাছাই করে তারপর ভাড়া নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, গত বছর রিয়ালের দাম ধরা হয়েছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। সেখানে এবার দাম বেড়ে যাওয়ায় ২৮ টাকা ৩৯ পয়সা ধরা হয়েছে। এতে হজের খরচ বেড়ে গেছে।
এ বছর বয়সের কোনো বাধা নেই জানিয়ে হাব সভাপতি বলেন, এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরা হজে যেতে পারবেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হবে এবং ১৫ মার্চের মধ্যে প্যাকেজের সব টাকা হজ এজেন্সির ব্যাংক হিসেবে জমা করে বা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ করার আহবান জানান তিনি। আগামী ২১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান হাব সভাপতি।
সরকারের সি ক্যাটাগরির প্যাকেজে হারাম শরিফ থেকে দুই হাজার মিটার দূরত্বে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একই ক্যাটাগরির হাজীদের জন্য সর্বোচ্চ দেড় হাজার মিটার দূরত্বে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করার সময় হজযাত্রীকে প্রাক-নিবন্ধনে ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম নিবন্ধনের নম্বর হুবহু লিপিবদ্ধ করতে হবে। সৌদি ভিসা লজমেন্টে জটিলতা দূর করার জন্য পূর্ণাঙ্গ নামে পাসপোর্ট করতে হবে। পাসপোর্টের তথ্যপাতা স্ট্যাপলার পিন দিয়ে গাঁথা যাবে না বা অন্য কোনোভাবে ছিদ্র করা যাবে না। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকার সনদ লাগবে বলেও জানান তিনি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশী হজ পালন করবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন এক লাখ ১২ হাজার ১৬৮ জন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাবের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, সহসভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব আবু তাহের প্রমুখ।
হজের খরচ সহনশীল পর্যায়ে রাখার আহবান : সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য হজ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইমাম ও উলামা পরিষদ। সংগঠনের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস মাওলানা আবুল কাশেম কাশেমী ও সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, হজ মুসলমানদের ফরজ রুকন। তাই সব মুসলমান চায় আল্লাহর ঘর কাবার জিয়ারত, আরাফাত মুজদালিফা, মিনাসহ মক্কা মদিনা জিয়ারতের। অল্প খরচ হলে সবাই চেষ্টা করে পবিত্র হজ পালনের। কিন্তু হজের খরচ সহনশীল পর্যায়ে না রাখলে অল্প আয়ের মানুষের পক্ষে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement