০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আইনজীবী পরিচয় দেয়া আতোয়ারকে পুলিশে সোপর্দ

সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতি-টাউট উচ্ছেদ অভিযান জোরদার

-

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানোর পর এবার ‘টাউট উচ্ছেদ অভিযান’ জোরদার করা হয়েছে। টাউট উচ্ছেদে কমিটি করার পাশাপাশি আদালত অঙ্গনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে জানাতে অভিযোগ বক্স স্থাপন করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আইনজীবী সমিতি ভবনের সম্পাদকের অফিস কক্ষের সামনে এ বক্স স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি বিলবোর্ড, ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দুর্নীতি ও টাউট উচ্ছেদে সচেতনতামূক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে যেকোনো পর্যায়ের ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত, অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং এবং বিকাশ, নগদ বা রকেটসহ অন্য কোনো মাধ্যমে অবৈধ আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সম্পাদকের অফিস কক্ষের সামনে স্থাপিত অভিযোগ বাক্সে জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও এতে বলা হয়েছে।
টাউট উচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সমিতি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ বিচারপ্রার্থী মক্কেলের নিকট হতে মামলা-মোকদ্দমা বা পরামর্শ প্রদান ও আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না। সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ এমনটি করলে তিনি টাউট হিসেবে গণ্য হবেন। সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অযথা ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতিপ্রাপ্ত আইনজীবী ব্যতীত বিচারপ্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, ক্লার্ক, মধ্য-স্বত্বভোগী, আইনের ছাত্র, শিক্ষানবিস, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিম্ন আদালতে প্র্যাকটিসের অনুমতিপ্রাপ্ত আইনজীবীগণ সুপ্রিম কোর্টে মামলা গ্রহণ, পরিচালনা, আইনগত পরামর্শ প্রদান, মামলাসংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্ট বারের কোনো কম্পিউটারের দোকানে আইনজীবীর উপস্থিতি ব্যতীত কম্পিউটার অপরেটর বা ক্লার্ক বা অন্য কেউ কোনো মামলার ড্রাফট করতে পারবেন না।’
ক্লার্কদের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ক্লার্করা কোনো বিচারপ্রার্থীর নিকট থেকে মামলা গ্রহণ, পরিচালনা, আইনগত পরামর্শ প্রদান ও মামলাসংক্রান্ত কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।’
সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো: আব্দুল জব্বার ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরো দায়িত্বে আছেন মার-ই-য়াম খন্দকার, মো: হুমায়ুন কবির, আমীরুল ইসলাম খোকন, মোহাম্মদ মহসিন কবির, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন রতন, রাশেদা আলম ঐশী, ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া, মো: সাহাব্দ্দুীন খান লার্জ এবং মোহাম্মদ রবিউল হোসেন।
আইনজীবী পরিচয় দেয়া টাউট আতোয়ারকে ধরে পুলিশে সোপর্দ ‘টাউট উচ্ছেদ’ অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আতোয়ার হোসেন নামে এক টাউটকে ধরেছেন সমিতির টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির সদস্যরা। আতোয়ার হোসেন নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ধর্ষণচেষ্টার একটি মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি করিয়ে দিতে এক লাখ টাকা খরচ দাবি করে। ইতোমধ্যে সে বিভিন্ন সময় মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ওই আসামির কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, শেরপুরের শ্রীবর্দী থানার চরশিমুলচূড়া গ্রামের মো: আব্দুল আজিজের (৭০) বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা হওয়ার পর থেকে পলাতক আব্দুল আজিজ। আজিজের দ্বিতীয় ছেলে পিকআপ চালক আশকর আলী তার হেলপারের সাথে মামলার বিষয়টি আলাপ করে। হেলপার তার বোনজামাই আতোয়ার হোসেনকে উকিল বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। আলাপকালে আতোয়ার হোসেন নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মামলাটি থেকে অব্যাহতি করিয়ে দিতে এক লাখ টাকা খরচ দাবি করে। এরপর আব্দুল আজিজের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আতোয়ার শেরপুর কোর্টে ওই মামলার জামিন শুনানি করতে যায়। সেখানে আদেশ হয়েছে জানিয়ে আরো ৩০ হাজার টাকা নেয় এবং আদেশের কপি চাওয়া হলে আদালত তা পরে দেবেন বলে জানায়। পরদিন আজিজকে ফোন করে আরো ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে সে। কিন্তু জামিন হয়েছে জেনেও ধর্ষণচেষ্টা মামলায় বাড়িতে সমন যাওয়ায় আজিজ আতোয়ারকে ফোন করেন। তখন আতোয়ার তাদের ঢাকার নবীনগরে আসতে বলেন এবং বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে হাজির হতে বলে তাদের কাছ থেকে আরো পাঁচ হাজার টাকা নেয়। মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাসে আসামি আব্দুল আজিজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে ছেলে ও তার বন্ধুসহ হাজির হন। এ সময় আতোয়ার আজিজের জামিন হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে একটি জাল নথি সরবরাহ করে। কিন্তু আজিজের ছেলের বন্ধু ওই নথিটি জামিননামা নয় বলে উল্লেখ করলে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে প্রতারণার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির নেতাদের কানে আসে। এরপর তারা সন্দেহজনকভাবে তাদের সবাইকে সমিতি ভবনে হাজির করে আতোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান।
আতোয়ার হোসেন টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির কাছে বলে, ২০১১ সালে টাঙ্গাইলে বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলাম; কিন্তু ২০১৩ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর আইন পড়ে পাস করা হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে টাঙ্গাইল কোর্টে মক্কেলদের থেকে মামলা নিয়ে উকিল ধরে আদেশ পাইয়ে দিতাম। অল্প কয়েক দিন হলো হাইকোর্টে এসেছি।
সমিতির সহসভাপতি ও টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া বলেন, আমরা শাহবাগ থানায় ফোন করেছিলাম। পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে টাউটদের কোনো জায়গা হবে না। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সুপ্রিম কোর্টে আমরা দুর্নীতি ও টাউট উচ্ছেদে সচেতনতামূলক প্রচারণ চালাচ্ছি। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড বাসানো হয়েছে, ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা হয়েছে এবং লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে আমাদের সমিতির সবার ফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের সামনে অভিযোগ জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া টাউট উচ্ছেদ কমিটির করা হয়েছে। আর কোনো অভিযোগ এলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের কাছে অভিযোগ আসায় আমরা বৃহস্পতিবার একজন টাউটকে আটক করে পুলিশে দিয়েছি। আমাদের অভিযোগের কারণে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি ও টাউটদের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement