২২ মে ২০২৪, ০৮ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫
`


বিপদের শঙ্কা বাড়ছে প্লাস্টিক ব্যবহারে

-

দেশে পলিথিন প্লাস্টিকের ব্যবহার থামছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেড়যুগে পলিথিনের ব্যবহার জনপ্রতি ২০ কেজি করে বেড়েছে। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকা প্লাস্টিক ব্যবহারে বড় বিপদের শঙ্কাও বাড়ছে। প্লাস্টিক থেকে প্রচুর কেমিক্যাল পরিবেশে ছড়াচ্ছে জানিয়ে পরিবেশবীদরা বলছেন, এসব কেমিক্যাল পানি ও মাটিতে মিশে উৎপাদিত খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। যা প্রতিটি মানুষকে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।
বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বৈশ্বিক মোট প্লাস্টিক দূষণের প্রায় ৩ শতাংশই হচ্ছে বাংলাদেশে। আর প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টিকারী বিশ্বের দশটি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের। এমতাবস্থায় এর নিয়ন্ত্রণ না হলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে যা মোকাবেলা অসম্ভব হবে।
একাধিক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালার মাধ্যমে মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। আর পোড়ানো বর্জ্যে কার্বন-মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বাতাস দূষিত করছে। অন্য দিকে পুরনো প্লাস্টিক পুড়িয়ে নতুন পণ্য তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আর ডাস্টবিনে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য ড্রেনের পানিতে ভেসে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় একবার ব্যবহারের পর ৮০ শতাংশ পলিথিনই মাটিতে ফেলা হচ্ছে। বছরে ১৭ হাজার টন পাতলা প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটিতে পড়ছে। যার ৭৩ শতাংশ মাটি ও পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। ফলে পলিথিন ইতোমধ্যে খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যেও চলে এসেছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের জানান, গত দেড়যুগে পলিথিনের ব্যবহার জনপ্রতি বেড়েছে ২০ কেজি। তার মতে, ২০০৫ সালে দেশে বছরে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল তিন কেজি। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ কেজি। তার ভাষ্য, লবণ, চিনি ও মাছের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের রক্তে মিশে গিয়ে শরীরে প্লাস্টিকের উপস্থিতি ধরা পড়ছে। এতেই প্রমাণিত প্লাস্টিক মানুষ ও পরিবেশের জন্য কত ভয়াবহ। যদিও ইতোমধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা তৈরি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাস্তবে তা বাস্তবায়নে কতটুকু সফলতা আসবে তা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ।
এ দিকে কানাডার রাজধানী অটোয়ায় জাতিসঙ্ঘের ইন্টার গভার্নমেন্টাল নেগোসিয়েশন কমিটির চতুর্থ অধিবেশন চলছে। সেখানে প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জানিয়ে সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব ভবিষ্যতে বিপদের বড় কারণ হতে পারে। উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগ ও সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এত বড় ঝুঁকি মোকাবেলা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তারা।

চলমান অধিবেশনে বলা হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকির পাশাপাশি চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে সমুদ্রে বিপজ্জনক পরিবেশ সৃষ্টি করছে উজানের দেশ থেকে আসা অধিকাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য।
সমাজবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসাইন এর মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮২ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য আসছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। বাংলাদেশ এটি তৈরি না করলেও এর কুফল ভোগ করছে। প্লাস্টিক থেকে প্রচুর কেমিক্যাল পরিবেশে ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব কেমিক্যাল ফসলের ক্ষেত থেকে শুরু করে মানুষের খাবারের প্লেটেও পৌঁছে যাচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এ সমস্যা সমাধানে সাহায্য চাওয়া হয়েছে সম্মেলনে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হয় সম্মেলনে।

 


আরো সংবাদ



premium cement