১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ছাতকের হাওরে-হাওরে চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব

ছাতকের নাইন্দার হাওরে ধান কাটার দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

ছাতকের হাওরে-হাওরে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। এ অঞ্চলের বিল-হাওরে বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি বোরো ধান। ফলন এবার ভালো হওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই যেন আনন্দ ফোয়ারা বইছে। কৃষকরা জানান, এ পর্যন্ত বন্যা ও ঝড়-বাদল না হওয়ায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন তারা।
গত কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আগাম জাতের বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে এ অঞ্চলে। ফলে কিছু কিছু এলাকার আগেভাগেই ধান পাকতে শুরু করেছে। বর্তমানে ধানকাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। কৃষাণ-কিষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের কাজে।
ছাতক উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ছোট-বড় বিল-হাওর রয়েছে ৬৩টি। চলতি বোরো মৌসুমে বোরোর আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ২ হাজার ১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটার এক মনোরম দৃশ্য। হাওরে ধানের খলায় কাজ করছেন কৃষক-শ্রমিক, নারী ও শিশুরা। কোনো কোনো হাওরে ধান কাটা, মাড়াই চলছে মেশিনের সাহায্যে। আবার কোনো কোনো এলাকায় শ্রমিকরা ধান কাটছেন এবং মাড়াই-ঝাড়াই করছেন সনাতন পদ্ধতিতেই।
কৃষকরা জানান, বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার আগে ও পরে এ অঞ্চলে তেমন শিলাবৃষ্টি হয়নি। জলাবদ্ধতায় কিছু ফসলের ক্ষতি হলেও এবার বোরোর ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
নোয়ারাই ইউনিয়নের কৃষক ও সাবেক মেম্বার মনির উদ্দিন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় নাইন্দার হাওরের কিছু ফসল জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে। মির্জার খালে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতায় হাওরের কোনো কোনো অংশের ফসল নষ্ট হয়েছে। স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে বাঁধ কেটে জলাবদ্ধতা থেকে হাওরের অনেক ফসল রক্ষা করতে পেরেছেন।
উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ আলী, আরশ আলী, জাকির হোসেন, আজাদ মিয়া, মোশাহিদ আলী, মানিক মিয়া ও হারুনুর রশিদ জানান, ছাতকের সব এলাকাতেই এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। কারণ এবার অতিবৃষ্টি বা খরায় এবার বোরো ফসলের ক্ষতি করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালি ফসল তারা যথাসময়ে গোলায় তুলতে পারবেন।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান জানান, চলতি মৌসুমে ছাতকে বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে থেকেই ধান কেটে নিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখানে আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শেষ হলেও বিল-হাওরের অর্ধেকের বেশি ধান এখনো কাটা হয়নি। আরো এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে সব বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান, উপজেলার নাইন্দার হাওর, ফাটার হাওরসহ বড় বড় হাওরগুলোর অর্ধেক বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ধান দ্রুত কেটে নেয়ার জন্য কৃষকদের আগে থেকেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরকারি ভর্তুকি মূল্যের ৪৩টি কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) দিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই মেশিনগুলো এখন ধান কাটায় ব্যস্ত।


আরো সংবাদ



premium cement