২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এখনো চালু করা যায়নি জিকে সেচ প্রকল্প

বছরের শুরুতেই পদ্মায় স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানি

৪ জেলার ৯৬ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পানিশূন্য পদ্মা : নয়া দিগন্ত -

দেখে এখন চেনার উপায় নেই এটি ছিল এককালের প্রমত্তা পদ্মা। যে নদীতে প্রবাহিত হতো ¯্রােতধারা এখন সেই নদীর বুকে শুধুই বিস্তৃত বালির চর। নদীর বুকে নৌকার পরিবর্তে চলছে ঘোড়া আর মহিশের গাড়ি। পানির প্রবাহ না থাকায় নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে। পদ্মায় পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় সেচের পানিরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদীতে পানি কম থাকায় এ বছর চালু করা যায়নি গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। আর এতে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলার ৯৬ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর প্রায় অর্ধেকের বেশি এলাকা পার হয়ে কিছুটা পানির দেখা মিললেও সেখানে পণ্যবাহী নৌকা চলে না। আর এতে সবচেয়ে দুর্ভোগে আছে পদ্মাপাড়ের জেলেরা।
পদ্মাপাড়ের জেলে শহিদুল বলেন, জীবনে এত কম পানি এর আগে দেখিনি। গত দুই মাসে দিনে দুই কেজির বেশি মাছ ধরতে পারিনি। অন্য কাজে দক্ষতা না থাকায় অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে শতাধিক জেলে পরিবারকে।
জিকে প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হামিদ বলেন, সেচ পাম্প চালাতে কমপক্ষে সাড়ে চার মিটার উচ্চতার পানির প্রয়োজন হয়। অথচ এ বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল চার দশমিক শূন্য সাত মিটার। এছাড়া প্রকল্পের তিনটি প্রধান সেচ পাম্পের দু’টি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে।
পানি পরিমাপক দফতর হাইড্রলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জানুয়ারির প্রথম দিন থেকেই প্রতি দফাতেই কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ হাজার কিউসেক কম পানি পাওয়া যাচ্ছে।
যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রতি দফায় (প্রতি দশ দিন অন্তর) পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৬৩ হাজার ১১৩ কিউসেক, ৪৮ হাজার ৫১৮ কিউসেক, ৪৮ হাজার ৩৫৯ কিউসেক, ৪৩ হাজার ৯২৬, ৩৪ হাজার ৬৯৭, ৩৫ হাজার ৭৫১ কিউসেক ও ৩৬ হাজার ৮১৮ কিউসেক।
গত বছর একই সময়ে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৮৫ হাজার ৩১৬ কিউসেক, ৭০ হাজার ৮২৭, ৬৯ হাজার ৯৯০, ৬৭ হাজার ৩৬৪, ৫৯ হাজার ৩৭৬, ৪৭ হাজার ৮৯১ কিউসেক ও ৪২ হাজার ৩৭২ কিউসেক।
চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা পয়েন্টে প্রথম ১০ দিন ৭০ হাজার কিউসেক বা কম পানি থাকলে দুই দেশ ৫০ শতাংশ করে পানির হিস্যা পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিন ৭০ থেক ৭৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পাবে এবং অবশিষ্ট পানি ভারত পাবে। চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত প্রতি মাসে ১০ দিনের একটি চক্র বাদ দিয়ে গ্যারান্টিযুক্তভাবে বাংলাদেশ ও ভারত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে।
শুষ্ক মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গা ও বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে দুই দেশ।
পাবনা হাইড্রলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, এ বছর শুরু থেকেই পদ্মার উজানে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ কম থাকায় চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও পরিমাণগত দিক থেকে পানি অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে পানি চুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement