১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ করতে হিমশিম

-

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েছে। এতে ব্যবসায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উদীয়মান মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে গেছে। তৃতীয় কিস্তি ছাড় পেতে একগুচ্ছ শর্ত পূরণ করতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকি কমানোর তাগিদ দেয়া দেয়া হয়েছে। আর এ দু’টি খাতের ওপর ভর্তুকি কমানো হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আবারো বাড়াতে হবে। এর ফলে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, যা সামাল দেয়া ভোক্তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে। অপর দিকে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে, যা বর্তমানে রয়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। আগামী জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা দুঃসাধ্য হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (ব্যাসেল-৩) ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন পর্যাপ্ততা প্রদর্শন করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব। সবমিলে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সাথে তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য বিদ্যমান শর্ত কিছুটা শিথিল করতে এখন দরকষাকষি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আইএমএফের প্রতিশ্রুত তৃতীয় কিস্তি অর্থ ছাড় পাওয়ার জন্য আগে দেয়া শর্তগুলো সরকার কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তা মূল্যায়ন করতে সংস্থাটির প্রতিনিধিরা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে সিরিজ বৈঠক করছেন। গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ সিরিজ বৈঠক আগামী ৮ মে পর্যন্ত চলবে। সফররত প্রতিনিধিদের সুপারিশ সংস্থাটির পর্ষদে উঠানো হবে। পর্ষদ অনুমোদন করলেই মিলবে তৃতীয় কিস্তির প্রায় ৭০ কোটি ডলারের ঋণ। সফররত আইএমএফ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থার ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিকস ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠক করে। প্রতিটি বৈঠকেই তাদের দেয়া শর্তগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ থেকে সরকারের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য মোটা দাগে প্রায় দুই ডজন শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহার কিছুটা বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এজন্য নতুন একটি নীতি প্রচলন করা হয়েছে। ছয় মাসের সরকারি ট্রেজারি বিলের গড় হারের সাথে বাড়তি আড়াই থেকে তিন শতাংশ সুদ যুক্ত করতে হচ্ছে। আর এতেই ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। যা গত জুনের আগে ছিল ৯ শতাংশ। ব্যাংক ঋণের সুদহার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। আর এতে সব ধরনের পণ্যের দামও বেড়েছে। ঋণ পাওয়ার অন্যতম আরেকটি শর্ত ছিল ডলারের দাম একক রেট করা। বর্তমানে রেমিট্যান্সের জন্য একটি দর, রফতানির জন্য অন্যটি এবং আমদানির জন্য আরেকটি রয়েছে। ডলারের দাম অভিন্ন করার শর্ত রয়েছে। আইএমএফের পক্ষ থেকে ঋণ দেয়ার অন্যতম শর্ত ছিল মার্চ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার নেট রিজার্ভ থাকতে হবে ১৯ দশমিক ২৬ হাজার বিলিয়ন ডলার। যদিও মার্চ শেষে এ রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নেরও কম রয়েছে বলে জানা গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শর্তানুযায়ী পূরণ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।

আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে পাঁচ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামানোর লক্ষ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা রয়েছে, যা মোট ঋণের ২০.৯৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপিঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ঋণের ৫.৯৩ শতাংশ। আইএমএফের শর্তানুযায়ী সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে যা প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) অর্থ বিভাগের সাথে বৈঠকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। একই সাথে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement